<p>ইউরিয়ার সংকটের কারণে কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে কৃষকরা মনে করছেন, এই পরামর্শ খুব একটা কাজে আসছে না। কারণ জৈব সারের কাঁচামাল পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। আবার জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কতটুকু কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট নয়।</p> <p>ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব এলাকার কৃষক আলফাজ হোসেন বলেন, ‘বাধ্য হয়ে আমাদের এখন জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এতে কিছুটা সাশ্রয় হবে। তবে জৈব সারের উপকরণ কিভাবে সহজলভ্য করা যায়, সে বিষয়ে সরকারিভাবে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।’</p> <p>স্থানীয় অনেক কৃষক মনে করছেন, কাঁচামালের অভাবের কারণে জৈব সার ব্যবহারের পরামর্শ খুব একটা কাজে আসছে না। কারণ গোবর এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। আবার জৈব সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন কতটুকু নিশ্চিত হবে, তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এ ছাড়া কচুরিপানা সংগ্রহ ও পরিবহন ব্যয় কিছুটা বেশি হবে—এমনটাই তাঁরা ধারণা করছেন।</p> <p>কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের প্রয়োজন প্রায় ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন। মূল্যবৃদ্ধির ফলে সারের জন্য কৃষককে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। এতে কৃষকের উৎপাদনশীলতা কমার পাশাপাশি চাল উৎপাদনও কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।</p> <p>এদিকে রাসায়নিক বা সুষম সারের পরিমিত ব্যবহারের জন্য কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি ব্যবহার বাড়াতে এর মূল উৎস গোবর নষ্ট না করার জন্যও কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।</p> <p>এ লক্ষ্যে সারা দেশের কৃষি অফিসগুলোতে নির্দেশনামূলক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কৃষকের মাঝে প্রচার বাড়াতে এসংক্রান্ত লিফলেট (প্রচারপত্র) পাঠানো হয়েছে।</p> <p>ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থানীয় পর্যায়ের কৃষি অফিস ওই লিফলেটের অনুলিপি তৈরি করে প্রচারকাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া গোবরের পাশাপাশি কচুরিপানাসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সার তৈরির কথা বলা হচ্ছে।</p> <p>আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ‘পরিমিত সার ব্যবহার ও জৈব সার ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে প্রচারের নির্দেশনা পেয়েছি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার শুরু হয়েছে।’</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে ওই কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, গোবর সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে আশা করি ইউরিয়ার ব্যবহার কমানো যাবে। বেশির ভাগ গোবর খোলা অবস্থায় থাকে বলে নিউট্রিয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়। গোবরে নাইট্রোজেন, পটাসিয়াম, ফসফট, জিংক, বোরন, আয়রন, সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি প্রায় ১৭টি পুষ্টি উপাদান থাকে।</p> <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো বিষয়ে চিঠি পেয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। রাসায়নিক সারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে হলেও জৈব সারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।</p> <p>সুশান্ত সাহা আরো বলেন, ‘জৈব সার উৎপাদন করে এটিকে ইউরিয়ার বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তবে গোবরের পাশাপাশি কচুরিপানা দিয়ে জৈব সার তৈরি করতে আমরা চেষ্টা করছি। কচুরিপানা দিয়ে সার তৈরির বিষয়টি অনেক কৃষক করছেন।’</p>