ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার উত্তর জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে বৃদ্ধ আব্দুস ছাত্তারের জায়গা দখলে নিতে গত বৃহস্পতিবার রামদা নিয়ে হামলা চালান প্রবাসী এবাদুল হক ও তাঁর লোকজন। ছবি : কালের কণ্ঠ
ময়মনসিংহের নান্দাইলে প্রায় ১৫ বছর ধরে নিজের জায়গায় দোকান করে ব্যবসা করছেন এক বৃদ্ধ। সম্প্রতি প্রতিবেশী এক ব্যক্তি ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করে জায়গাটির দখলে যায়। এতে বাধা দিতে গেলে ওই বৃদ্ধের ওপর রামদা নিয়ে হামলা চালানো হয়। গতকাল শুক্রবার সকালে এর একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড হলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়।
বিজ্ঞাপন
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, দোকানঘরের মালিক হচ্ছেন আব্দুস ছাত্তার (৬৫)। দোকানঘরটি তাঁর পৈতৃক জমির ওপর নির্মিত বলে জানান তিনি। ১৯৮৪ সালের বিআরএস জরিপের পরচা দেখিয়ে বলেন, এই জমি পুকুর শ্রেণির। তিনি পুকুরের পার ভরাট করে তাতে দোকানঘর নির্মাণ করে ১৫ বছর ধরে ভাড়ায় খাটাচ্ছেন।
ভুক্তভোগী আব্দুস ছাত্তার আরো বলেন, সিডস্টোর চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরের বাসিন্দা পারভেজ মিয়া ও এবাদুল হকের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র হামলাকারী গত বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করে হামলা চালিয়ে তাঁর দোকানঘরটি ভাঙচুর করতে শুরু করে। তিনি উপায় না দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ নম্বরে ফোন করেন।
ঘণ্টা দেড়েক পর পুলিশ সিডস্টোরে এসে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে চলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর হামলাকারীরা আবার হামলা চালিয়ে দোকানঘরটি ভেঙে চুরমার করে দেয়। আবারও ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাইলে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ চরম বিরক্ত হয়। দুইবার ফোন করেও তিনি দোকানঘরটি ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি।
এ ব্যাপারে বৃদ্ধ আব্দুস ছাত্তারের ছেলে আব্দুল মজিদ জানান, হামলাকারীদের প্রধান এবাদুল হক ইতালিপ্রবাসী। সম্প্রতি তিনি দেশে এসেই পরিকল্পনা করেন জায়গা দখলের। তাঁর নেতৃত্বেই সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ সময় এবাদুল ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে দেশি অস্ত্র ছাড়াও নিজেদের পালিত কুকুর তাঁর বাবার ওপর লেলিয়ে দেন। এতে কুকুরটি তাঁর বৃদ্ধ বাবাকে কামড়ে দেয়। তা ছাড়া ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের অবস্থান ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই প্রতিপক্ষরা বেশি সাহস পেয়েছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য বাড়িতে খোঁজ করেও এবাদুল হককে পাওয়া যায়নি। পরে এবাদুল হকের ভাই পারভেজ মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, দোকানঘরটি তাঁদের জমির ওপর ছিল। এ কারণে সেখানে গিয়ে দোকানঘরটি ভেঙে ফেলেছেন তাঁরা। তবে বৃদ্ধকে লাঞ্ছিত করা হয়নি, বরং বৃদ্ধই তাঁদের ওপর হামলা করতে চেয়েছিলেন।
ভিডিওতে তো কুকুর ও অস্ত্র দেখা গেছে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পারভেজ মিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের পালিত কুকুর। কেউ আমাদের আক্রমণ করছে দেখতে পেয়ে বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তারকে কামড়ে দিয়েছে কুকুরটি। তা ছাড়া কুড়াল ও রামদা নেওয়া হয়েছিল টিন ও বাঁশ কাটার জন্য। ’
এ ব্যাপারে নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক পূর্ণ চিচাম বলেন, ‘৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত করে আসি। তার পরও কেন দোকান ভাঙচুর করল, তা জানা নেই। তা ছাড়া জমিসংক্রান্ত বিরোধে উভয় পক্ষেরই থানায় অভিযোগ রয়েছে। তবে এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে থানায় উভয় পক্ষকে আসতে বলা হয়েছে। ’