সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপারের গ্রাম জয়পুর। গ্রামটির পূর্ব প্রান্তে বাস করেন আয়েশা বেগম। গ্রামটিতে ৭১টি পরিবার বাস করলেও কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানও।
বিজ্ঞাপন
গত ১৬ জুন রাত ১০টার দিকে আয়েশার ঘরের ভেতর বানের পানি ঢোকে। ঘর থেকে বের হওয়ারও সময় পাচ্ছিলেন না। এক কাপড়ে সবাই পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। চোখের সামনেই টাঙ্গুয়ার হাওরের ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাঁর ঘরটি। এ সময় ভেসে যায় ঘরে থাকা ২০ মণ ধান, ২০ কেজি চাল, খাট, হাঁড়ি-পাতিলসহ সবই। পরদিন মাছ ধরতে গিয়ে গ্রামের লোকজন খাটের একটি অংশ ও ঘরের চালার তিনটি ভাঙা টিন উদ্ধার করে শূন্য ভিটার মধ্যে থাকা খুঁটিতে বেঁধে রেখে যায়।
আয়েশা জানান, স্বামী লায়েছ মিয়া ছিলেন পেশায় জেলে। গত বৈশাখে মারা যান তিনি। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার; কিন্তু বন্যার পানি আর হাওরের ঢেউ একমাত্র সম্বল ঘরটিও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর গ্রামের লোকজন মিলে ২০ মণ ধান দিয়েছিল। তা-ও পানিতে ভেসে গেছে। বসতঘরের থাকা সব কিছুই বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়েছে। এখন বন্যার পানি কমছে, লোকজন নিজ ঘরে ফিরছে; কিন্তু আয়েশার ভিটায় কবে ঘর উঠবে আর নিজের ঘরে থাকবেন, তা জানেন না তিনি।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আয়েশার শূন্য ভিটায় পড়ে আছে তিনটি পুরনো ভাঙা টিন আর খাটের একটি অংশ। চোখের জল ফেলতে ফেলতে আয়েশা তাঁর দুঃখের কথা শোনান। তিনি বলেন, ‘গ্রামে এমন কোনো ঘর নেই, যেখানে আমরা অতিরিক্ত চারজন থাকতে পারি। তবুও মিলেমিশে কোনোভাবে থাকছি। পানি কমায় বড় মেয়ে তাজমিনাকে ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছি কাজে। আমরা এখন ত্রাণের চাল-ডাল ও চিড়া খেয়ে আছি। ’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘ভাতই খাইতাম পারি না, ঘর বানামু ক্যামনে?’
এ ব্যাপারে তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, ‘আয়েশার খোঁজ নিয়ে ঘর তৈরির জন্য সহায়তা দেওয়া হবে। ’