জ্বালানি সনদ চুক্তি (এনার্জি চার্টার ট্রিটি বা ইসিটি) কোনোভাবেই জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে না। এতে জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাধাগ্রস্ত হবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র—এমনটাই আশঙ্কা করেছেন ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশের মতো ছোট রাষ্ট্রের জন্য জ্বালানি সনদ চুক্তি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে’ এ অভিমত উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, জ্বালানি সনদ চুক্তির মূল উদ্যোক্তা ছিল নেদারল্যান্ডস। তারাই এখন বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৯১ সালে ডাবলিনে এক সভায় ডাচ্ প্রধানমন্ত্রী এনার্জি কমিউনিটি গড়ার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের হাত ধরে ইউরোপীয় জ্বালানি সনদ চূড়ান্ত হয়। জ্বালানি সনদ চুক্তিটি ১৯৯৮ সাল থেকে কার্যকর হয়। বর্তমানে ৫৩টি দেশ ও অর্থনৈতিক জোট চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এখন অনেক দেশই এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার কথা চিন্তা করছে।
সংলাপে জানানো হয়, চলতি বছরের শুরুতে ইউরোপিয়ান কমিশনের সংশোধন প্রস্তাবকে ঘিরে জ্বালানি সনদ চুক্তি—যার ইংরেজি নাম ‘এনার্জি চার্টার ট্রিটি’ আবার আলোচনায় এসেছে। জ্বালানি খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিনিয়োগকারী কম্পানি, ব্যক্তি অথবা অন্য কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষকে রক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে প্রণীত হয় জ্বালানি সনদ চুক্তিটি। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে যেকোনো রাষ্ট্র জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষার আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নিশ্চয়তা প্রদান করে। সনদে স্বদেশি-বিদেশি বাছবিচার না করে সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এনার্জি চার্টারে স্বাক্ষর করে এখন পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য সম্মেলনে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, শিগগিরই চুক্তি করার পথে রয়েছে। ধারা ৫, ১১ ও ১৪ অনুযায়ী লোকাল কোনো পণ্য ব্যবহারে বাধ্য করতে পারবে না। জনবলও নিতে বাধ্য করা যাবে না।
সংলাপে আরো জানানো হয়, ভোক্তার জন্য জ্বালানি মূল্য কমালে বিনিয়োগকারী যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে মামলা করতে পারবে। এই সনদে সই করলে বিদেশি কম্পানি বিনা বাধায় তাদের পুঁজি, মুনাফা ফেরত নিয়ে যেতে পারবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে, বিনিয়োগসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনে অতি ব্যয়বহুল আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্যান্য আইনের মতো প্রাথমিক ধাপে স্বাগতিক রাষ্ট্রের আদালতে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। এই সনদ স্বাগতিক দেশের জন্য একটি অসম ও ভারসাম্যহীন অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি কিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জ্বালানির মূল্য কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। যেসব দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানির দাম ওঠানামা করে তাদের মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। আমেরিকা তার উপযুক্ত উদাহরণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জ্বালানির দাম জনগণের নাগালে রাখতে হবে।
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব বিইআরসির। কিন্তু তারা আইন যথাযথভাবে পালন করছে না। তারা লুণ্ঠনমূলক ব্যয় অনুমোদন দিচ্ছে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এমনকি সামাজিকভাবেও তেমন কোনো আন্দোলন দেখা যাচ্ছে না। এ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির নামে নিম্নমানের জিনিসের ব্যবসা হচ্ছে। রাজস্থানে যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, সেখানে তিন টাকার কম খরচ পড়ছে।