পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বদলেছে ব্যস্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিত্র। আগের মতো যাত্রী না থাকলেও সেটিকে ঈদের আগের স্বাভাবিক চিত্র বলছে লঞ্চ মালিক সমিতি। দু-এক মাসের মধ্যে লঞ্চের যাত্রীরা আবার ঘাটে ভিড় করবে বলে বিশ্বাস তাদের। সেই বিশ্বাসেই নির্দিষ্ট সময়ে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন রুটে।
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটির সেক্রেটারি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন যাত্রী একটু কম। আমরা আশা করছি, দু-এক মাসের মধ্যে এই অবস্থা কেটে যাবে। এখন উত্সুক মানুষ পদ্মা সেতু দেখতে যাবে। এরপর বেশির ভাগই আবার লঞ্চে ফিরে আসবে। বর্তমানে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যাত্রী কিছুটা কম হলেও সব লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে। ’
ঈদের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, অন্যান্য বছরের মতোই প্রস্তুতি থাকবে। তবে ২ জুলাইয়ের সভার পর কবে টিকিট দেওয়া যাবে বা প্রস্তুতি কী ধরনের হবে—এসব ঠিক করা হবে। তখন বলতে পারব। ’
সমিতি সূত্র জানায়, সমিতির অন্তর্ভুক্ত লঞ্চের সংখ্যা ২২৩। এর মধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর রুটের ২৩-২৪টি লঞ্চ বর্তমানে বন্ধ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে চলাচলকারী ১৩০টি লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে দক্ষিণের বাকি নৌপথে তেমন প্রভাব পড়েনি। ঢাকা-ভোলা, পাতারহাট (ভোলা), ঘোষের হাট/লেতরা বাজার, দেওয়ানবাড়ী (ভোলা), ইলিশা (ভোলা), লালমোহন (ভোলা), বোরহানউদ্দিন (ভোলা), বেতুয়া ও চরফ্যাশন (ভোলা), হাকিমুদ্দিন ও নোয়াখালীর হাতিয়া, এ ছাড়া ঢাকা-চাঁদপুর রুটে এবং চাঁদপুর-ঈদগাহ ফেরিঘাট (শরীয়তপুর) রুটে প্রতিদিনই যাত্রী রয়েছে। এ দুই রুটে পদ্মা সেতুর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-তুষখালি রুটের এমভি মানিক-১ লঞ্চের ডেকে শুয়ে আছেন এক যাত্রী। কোথায় যাবেন? লঞ্চে কেন যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবু মিয়া নামের ওই যাত্রী বলেন, ‘আমি অসুস্থ মানুষ। বরিশাল যাব। আমরা লঞ্চ দিয়েই যাই। এখানে শুয়ে যেতে পারতেছি। বাসে তো সেটা পারি না। ’
লঞ্চের কর্মী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মানুষ আরামে যাওনের জইন্যে লঞ্চেই আসে। ঘরের মতো সব সুবিধা। একা লোকেরা হয়তো বাসে যাইবে। পরিবার নিয়া মানুষজন লঞ্চেই আইবে। ’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ জনপদে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুযোগ হলেও স্বল্প খরচ, নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য সদরঘাটে যাত্রী পাওয়া নিয়ে লঞ্চ মালিকদের চিন্তা নেই। তাঁরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শিমুলিয়া (মাওয়া) থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি রুটে সরাসরি প্রভাব পড়লেও দেশের সার্বিক লঞ্চ ব্যবসায় তেমন প্রভাব পড়বে না। জরুরি প্রয়োজনে অনেকে হয়তো সড়কপথে গন্তব্যে যাবে, কিন্তু স্বস্তির যাত্রা খুঁজবে নৌপথেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার (বিআইডাব্লিউপিসিএ) সেক্রেটারি সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাস থেকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখনো নতুন নতুন লঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। মেঘনা-দাউদকান্দি সেতু চালুর পরও এমন আলোচনা হয়েছিল চাঁদপুরের যাত্রী নিয়ে। কিন্তু এখনো আধাঘণ্টা পর পর এ রুটে লঞ্চ চলছে। আমাদের বিশ্বাস, সাময়িক বিরূপ সময় কাটিয়ে লঞ্চ রুটগুলো টিকে থাকবে। ’