কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে সব কেন্দ্র ও ভোটকক্ষে (বুথে) ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এসব সিসি ক্যামেরা স্থাপনে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। কমিশন থেকে জানানো হয়, দেশের ইতিহাসে কুসিক নির্বাচনে এই প্রথম সব ভোটকক্ষে স্থাপন করা হবে সিসি ক্যামেরা। ভোটের আগের দিন থেকে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত একটানা ৪৮ ঘণ্টা আট শতাধিক সিসি ক্যামেরা ধারণ করবে ভোটকেন্দ্রের সব তথ্য।
বিজ্ঞাপন
কুসিক নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা নিয়ে কুমিল্লা নগরজুড়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রার্থী ও ভোটার বলছেন, বুথে বুথে সিসি ক্যামেরা স্থানের উদ্যোগ নতুন মাত্রা যোগ করল। এতে সুষ্ঠু ভোট হওয়া নিয়ে আস্থা বাড়বে। আর ভোটাররাও ভোট দিতে আগ্রহী হবেন। তবে বেশির ভাগ প্রার্থী দাবি করেছেন, ভোটগ্রহণের সময় তাঁদেরও সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দিতে হবে। জবাবে রিটার্নিং অফিসার বলেছেন, প্রার্থীরা বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে তিনি কমিশনকে জানাবেন।
নগরীর বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তবে ভোটকক্ষে শুধু সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলেই হবে না, ভোটগ্রহণ চলাকালে প্রতিটি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আবার কেউ বলেছেন, এখনো নির্বাচনের প্রতি ভোটারদের আস্থা ফেরেনি। এখন যাঁদের মধ্যে নির্বাচনের আমেজ দেখা যাচ্ছে তাঁরা রাজনৈতিক দলের কর্মী। নির্বাচন উত্সবমুখর করতে হলে কমিশনকে প্রথমে ভোটারদের নির্বাচনের প্রতি আশ্বস্ত করতে হবে।
কুসিক নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন ছয়জন প্রার্থী। এর মধ্যে চারজন হেভিওয়েট। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, আরেক বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।
এই চার হেবিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে রবিবার বিকেলে কথা হয়েছে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকের। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিফাত ছাড়া অন্য তিন হেবিওয়েট প্রার্থী প্রতি কেন্দ্রে ও ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। আর রিফাত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মাসুদ পারভেজ খান ইমরান গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতিটি ক্যামেরা যদি পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে আমরা সব বুথে এজেন্ট না দিলেও চলবে। এতে প্রার্থীদের খরচ অনেক কমবে। আর ভোটকক্ষে দাঁড়িয়ে কাউকে জোর করে নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা যাবে না। যারা পেশিশক্তি ব্যবহার করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তারা এই উদ্যোগের বিরোধিতা করবে। ’
মনিরুল হক সাক্কু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন উদ্যোগের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন। তবে ভোটগ্রহণের সময় তারা এটার কতটুকু ব্যবহার করতে পারবে সেটাই বড় কথা। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে মানুষ অবশ্যই ভোট দিতে আসবে। ’
নিজাম উদ্দিন কায়সার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্যোগটা ভালো, তবে আমার কাছে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার না। সিসি ক্যামেরা কী সুষ্ঠু ভোটের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে, নাকি ভোটারদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য? কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ক্যামেরা স্থাপন করে তাহলে ভোটের দিন আমরাও সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এখন সব কিছু অনলাইনে সম্ভব। আমাদের পাসওয়ার্ড দিলে আমরাও সব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারব। ’
বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১২
কুসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি মামলার এজাহারভুক্ত এই ১২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি সহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।