<p>ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের সাঁকোর ঘাট এলাকায় কাঁচামাটিয়া নদীর বুকে একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুত সেতু না হওয়ায় স্থানীয়রা গত ঈদের সময় এই কাঁচা রাস্তা তৈরি করে। এতে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।</p> <p>এলাকাবাসী ও রাস্তা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক তৈরির আগে দুই পারে যাতায়াত করার জন্য এখানে একটি বাঁশের তৈরি সাঁকো ছিল। সাঁকো দিয়ে চর এলাকা কুলিয়ারচর, উজানচর্ণপড়া, মেছোয়াডাঙ্গা ও যাদুয়ারচর এবং বীর এলাকার ঘাঘড়া, মমরোজপুর, বি-ঘাঘড়া ও বট্টপুর গ্রামের প্রায় ১০ হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করত। এই অবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের আগে আশ্বাস দেন, এখানে সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর কেউ কথা রাখেননি। ফলে ওই সব এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এর মধ্যে গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তখনকার চেয়ারম্যান কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে দুই পারের মানুষের চলাচলের জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। কিন্তু তিনি নির্বাচনে পরাজিত হলেও জনগণের কথা রাখতে গিয়ে সম্প্রতি এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাঁকোর স্থলে নদীতে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় যাতায়াত করতে সুবিধা হলেও আসন্ন বর্ষাকালে নদীর পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>সাঁকোর ঘাট এলাকাটি উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই ঘাটের পশ্চিম পাশের গ্রামগুলো চরাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে পূর্ব পাশের গ্রামগুলো বীর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই দুই অঞ্চলের লোকজনের চলাচলের জন্য কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর বাঁশের তৈরি একটি সাঁকো বসানো হয়।</p> <p>বীর অঞ্চলের মমরুজপুর এলাকার কায়েকজন বাসিন্দা বলেন, সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করার সময় অনেকে পা পিছলে পড়ে আহত হয়েছে। চরাঞ্চলের কোনো অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে হলে স্বজনরা বিপাকে পড়ত। চলাচলের জন্য প্রায় দেড় শ ফুটের মতো এই স্থানটি ছিল দুই অঞ্চলের মানুষের চরম দুঃখ।</p> <p> </p> <p>কুলিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা রনি বলেন, ‘সরকারের টাকা নানা খাতে খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের জন্য কিছু করা হচ্ছিল না। তাই দুই অঞ্চলের মানুষ ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে মাটি কাটায় যুক্ত হয়ে রাস্তা তৈরির কাজ করেছেন।’</p> <p>রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী এ কে এম মোদাব্বিরুল ইসলাম বলেন, তিনি গ্রামবাসীকে কথা দিয়েছিলেন, সাঁকোর স্থলে একটি সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করে দেবেন। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন। তার পরও নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলাচলের জন্য একটি সড়ক তৈরি করে দিয়েছেন।</p> <p>রাস্তাটি নদীর পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করবে কি না, জানতে চাইলে মোদাব্বিরুল ইসলাম বলেন, ‘সে জন্য কয়েকটি পাইপ লাগিয়ে দিয়েছি।’ কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলী ফকির। তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ হয়েছে। যেখানে সেতুর প্রয়োজন নেই সেখানে যদি সেতু হতে পারে, এখানে হবে না কেন।’</p> <p>এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘এটা তো খুবই অন্যায় কাজ। আগে জানা ছিল না। এখনি খোঁজখবর নিচ্ছি।’</p>