দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে কতজনের? সরকারি হিসাবে ৩০ হাজার, নাকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুসারে দেড় লাখ—এ নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়। অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রতিবেদনটি কোন পদ্ধতিতে করা হয়েছে, কোন কোন তথ্যের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে, তা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। তবে দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা ডাব্লিউএইচওর প্রতিবেদনকে যৌক্তিক বলেই মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার প্রচার হওয়া ডাব্লিউএইচওর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, করোনায় বাংলাদেশে সরকারি হিসাবের পাঁচ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি হিসাবের তুলনায় মিসরে ১১.৬, ভারতে ৯.৯, পাকিস্তানে ৮ এবং ইন্দোনেশিয়াতে ৭.১ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সংস্থাটির এই প্রতিবেদনকে যৌক্তিক বলে মনে করেন দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরাও। ডাব্লিউএইচওর দক্ষিণ এশীয় উপদেষ্টা দলের সদস্য অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘সরকারিভাবে দেশে করোনায় মৃত্যুর যে সংখ্যা জানানো হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেকে বেশি। এটা আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। সরকারি হিসাবে আমরা সরাসরি যাদের করোনায় মৃত্যু হয়েছে তাদের একটি বড় অংশের তথ্য পাচ্ছি। করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের তথ্য সরকারি হিসাবে নেই। পরে হার্ট অ্যাটাক বা অন্য কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সেটাও করোনার কারণে হয়েছে কি না, সে পরীক্ষা হয়নি। অনেকের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করা হয়েছে। ’
ডা. বে-নজির বলেন, ‘আমরা করোনার লক্ষণ নিয়ে অনেকের মৃত্যুর কথা জেনেছি। হাসপাতালের পরীক্ষার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু করোনা পরীক্ষা হয়নি। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রসবকালের ছয় থেকে সাত হাজার মায়ের মৃত্যু হয়। গর্ভবতী মায়েরা করোনা টিকা নিতে পারেননি। তাঁদের কিছু অংশের মৃত্যু করোনার কারণেও হতে পারে। কেউ কালাজ্বরে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে যদি মারা যায় তাহলে আমরা তার মৃত্যু কালাজ্বরে হয়েছে বলে ধরে নিই। করোনার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হতে পারে। ’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের দেশে করোনা পরীক্ষার হারও অনেক দেশের তুলনায় কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটি যে মডেল অনুযায়ী করা হয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অনুমানের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য করা হয়েছে। তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু সরকারি হিসাবের তুলনায় এটা পাঁচ গুণ কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে, এ বিষয়ে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হোক এবং ওই কমিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করুক। ’
অধ্যাপক বে-নজির বলেন, ‘সরকারি হিসাবে করোনায় মৃত্যু প্রায় ৩০ হাজার। এর পাঁচ গুণ বেশি হলে দেড় লাখ হয়। এটা হলে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধসে পড়বে, আমাদের কোয়ালিটি কমে যাবে—এমন কোনো কারণ নেই। এতে আমাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হবে। আমরা প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যাটি যদি বলতে পারি, তাহলে আমাদের ঘাটতিগুলো শোধরানোর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুযোগ হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিকভাবে সহায়তা পেতে পারি। অযথা রাজনৈতিকভাবে কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের বিরোধিতা করার কোনো প্রয়োজন দেখি না। ’