স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই দূরপাল্লার বাসে। নেই বিধি-নিষেধ মেনে চলার প্রবণতাও। দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রেতার মুখে যেমন মাস্ক নেই, টিকিট ক্রেতার মুখেও নেই। কোনো কোনো বাসচালক এবং সহকারীর থুঁতনিতে মাস্ক ঝুললেও টিকা নেওয়ার সনদ পাওয়া যায়নি কারো কাছে।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে বাসযাত্রী ও কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নামাচ্ছিল গাবতলী বাস টার্মিনালের বিপরীতে। সেখানে দেখা গেছে, দু-একজন যাত্রী ছাড়া অন্য যাত্রীদের কারো মুখে মাস্ক নেই। যাত্রী কবিরুল আলম এসেছেন রাজশাহীর বাগমারা থেকে। মুখে কেন মাস্ক নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অসুখ নেই। ’ একই বাসের মাস্ক পরিহিত যাত্রী পুঁটিয়ার সানাউল হক বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘যাত্রী ওঠানোর আগে বাসটি জীবণুমুক্ত করা হয়নি। কোনো যাত্রীকে দেওয়া হয়নি হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আমরা কয়েকজন বলার পরও বাসের লোকেরা যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলেনি। ’
গাবতলী বাস টার্মিনালের রাবেয়া, সৌহার্দ্য, এসপি সুপার, হানিফ, সুবর্ণসহ একাধিক পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, টিকিট বিক্রেতাদের কারো মুখে মাস্ক নেই।
একই অবস্থা মহাখালী বাস টার্মিনালের। সেখানে শ্যামলী বাংলা, নেত্র পরিবহন, দ্রুতগামী, নিরাপদ, সৌখিন, ধলেশ্বরীসহ একাধিক বাসের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে টিকিট বিক্রেতা-ক্রেতা কারো মুখেই নেই মাস্ক। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দোলা, একুশে, সেবা, পর্যটকসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, মাস্ক ব্যবহারকারী কেউ নেই। প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কয়েক লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আসছে, আবার রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে ঢাকা থেকে ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ম্যানেজার তরুণ সরকার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, বাস মালিক, শ্রমিক প্রতিনিধিসহ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরই কেউ আর কিছু মানছে না। ’
গাবতলী থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করে ২৬৩টি পরিবহন। একটি পরিবহনের ১০টি করে বাস থাকলেও শুধু গাবতলী থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়া-আসা করে দুই হাজার ৬৩০টি বাস। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাতায়াত করে ২৩৬টি পরিবহন। প্রতি পরিবহনে গড়ে ১০টি বাস ধরলেও যাতায়াত করা বাসের সংখ্যা দুই হাজার ৩৬০টি। মহাখালী টার্মিনাল থেকে চলাচল করে ১৯৭টি পরিবহন। গড়ে ১০টি করে বাস হলেও এক হাজার ৯৭০টি বাস যাতায়াত করে।
বাস মালিক নেতারা জানান, রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে ছয় হাজার ৯৬০টি। প্রতিটি বাসে ৪০ জন করে যাত্রী বহন করা হলেও প্রতিদিন রাজধানীতে প্রবেশ এবং রাজধানী ছেড়ে বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ মানুষ।