<p>ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সংরক্ষিত বনের জমিতে চাষাবাদের অনুমতি দিয়েছে বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বশিউক)। এ জন্য ৩২ একর জমি ৫৮ লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য স্থানীয় ব্যক্তিদের কাজে ইজারা দেওয়া হয়েছে। বন বিভাগ জানায়, বশিউক বনের জমিতে চাষাবাদের অনুমতি দিতে পারে না।</p> <p>সন্তোষপুর রাবার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগ থেকে ১৯৮৯-৯০ সালে সন্তোষপুর রাবার চাষের জন্য জমি বরাদ্দ নেয় বশিউক। ১৯৯৩-৯৪ সালে বাগান সৃষ্টির কাজ শুরু করে। রাবারগাছ ছয় বছর পরিচর্যা শেষে অষ্টম বছরে উৎপাদনে আসে। রাবারগাছ ২৫ বছর অব্যাহত উৎপাদন দেওয়ার পর ৩২-৩৩ বছর বয়সে জীবনচক্র হারায়। সন্তোষপুর রাবার বাগানে ১৯১টি ব্লক ছিল। প্রতিটি ব্লকে ৩০০ করে গাছ ছিল। রাবারগাছের তিন-চার ফুট ওপরে ৩০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বিশেষ ধরনের টেপিং চাকু দিয়ে গাছের অর্ধেক অংশের এক মিলিমিটার বাকল কর্তন করে কষ আহরণের নিয়ম। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনভিজ্ঞ টেপার দ্বারা অপরিকল্পিতভাবে ছয় ফুট ওপরে রাবারগাছে টেপিং করা হয়েছে। যে কারণে ১৮-১৯ বছরে রাবারগাছগুলো জীবনচক্র হারায়। হালকা ঝড়-বৃষ্টি হলে শত শত রাবারগাছ ভেঙে যায়। এ কারণে গত প্রায় চার বছরে ৪/৯৪ ব্লকে ২০ একর, ৫/৯৪ ব্লকে ১৮ একর, ৬/৯৪ ব্লকে ৪৬ একর এবং নতুন ৩২ একরসহ প্রায় ২০০ একর জমিতে পুনরায় বাগান করতে হয়েছে।</p> <p>সন্তোষপুর রাবার কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে প্রায় সাত মাস আগে ৩২ একর বাগানের গাছ কেটে ফেলা হয়। গাছের গোড়াগুলো এখনো রয়েছে।</p> <p>গত ২৩ ডিসেম্বর বশিউক টাঙ্গাইল ও শেরপুর জোন সন্তোষপুর রাবার বাগানের সাতটি প্লটে ৩২ একর জমি সাথি ফসলের জন্য দরপত্র ডাকে। ১-৬ নম্বর প্লটে পাঁচ একর এবং ৭ নম্বর প্লটে দুই একর জমি রয়েছে। ৫০০ টাকা করে ১৭০টি শিডিউল বিক্রি হয়। সর্বোচ্চ দরদাতারা ৫৮ লাখ টাকায় ৩২ একর জমি তিন বছরের জন্য চাষাবাদের অনুমতি পান।</p> <p>এর আগেও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অন্তত ১৫০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে চাষাবাদ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দুই বছর আগে চাষ করতে গিয়ে রাতে ৪৬ একর বাগানের শত শত রাবারগাছের চারা ভেঙে ও উপড়ে ফেলে, যাতে ফসলে রাবারগাছের ছায়া না পড়ে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছিল।</p> <p>সন্তোষপুরের আবুল হোসেন বলেন, ‘রাবার বাগানে চাষাবাদ করলে লাভবান হন প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগান। আন্ত ফসল করতে গিয়ে বাগানের চারা ভেঙে ফেলে। সংরক্ষিত বনের জমি এভাবে দখল করে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে যেহেতু লিজগ্রহীতারা জমিতে যাবে, ফসল করতে গিয়ে বাগান নষ্ট হলে কারো কিছু বলার থাকবে না।’</p> <p>সন্তোষপুর রাবার প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. হারুন অর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘টাঙ্গাইল ও শেরপুর জোন অফিসের অনুমোদনক্রমে শর্ত সাপেক্ষে বাগানে আন্ত/সাথি ফসলের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ বনের জমি ইজারা দেওয়া যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইজারা নয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাথি ফসল চাষের অনুমোদন দিয়েছে।’</p> <p>সন্তোষপুর বন বিট কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম খান জানান, রাবারের জমি বন বিভাগের। রাবার কর্তৃপক্ষ ইজারা দিতে পারে না। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।</p>
