বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব গণতান্ত্রিক ভাবনা ‘রপ্তানি’র চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে একে বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে চীন। গতকাল রবিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় গণতন্ত্র সম্মেলন সামনে রেখে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এর আগে ১ ডিসেম্বর রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দিয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
চীন সরকারের প্রতিবেদনে গণতান্ত্রিক নীতি, আদর্শ ও চর্চা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পিছু হটার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরা হয়েছে। বেইজিংয়ের এই অবস্থান জানানোর পর ঢাকায় চীনের দূতাবাস স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে।
মার্কিন গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে গত সপ্তাহে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিবৃতির সঙ্গে চীনের প্রতিবেদনের অনেকটা মিল রয়েছে। রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে তাদের অবস্থান বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে জানিয়েছে। বাংলাদেশও গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে দেশ দুটির বার্তা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
চীন সরকারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব গণতান্ত্রিক চর্চা ও ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে এবং অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ধরন বদলাবে। ’
চীনের প্রতিবেদনে প্রস্তাবনা ও উপসংহার ছাড়াও ‘গণতন্ত্র কী?’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের বিচ্ছিন্নতা ও তিনটি বিপর্যয়’ শিরোনামে দুটি অংশ রয়েছে।
প্রতিবেদনে চীন বলেছে, গণতন্ত্র মানবতার এক অভিন্ন মূল্যবোধ। তবে গণতন্ত্রের কোনো একক মডেল নেই। ভিন্ন রাজনৈতিক সভ্যতায় এটি ভিন্ন রূপ নেয়। একক কোনো মানদণ্ড দিয়ে বিশ্বের বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিমাপ করা পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক।
অন্য দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার সমালোচনা করে চীন বলেছে, কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত তার নাগরিকদেরই নেওয়া উচিত। ‘বাইরের কোনো সংখ্যালঘুর’ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
প্রতিবেদনে চীন বলেছে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক উন্নয়নে এগিয়ে ছিল। তবে বিগত বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূলমন্ত্র থেকে ক্রমেই সে সরে যাচ্ছে। তাদের গণতন্ত্র ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে তার নিজের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা।
গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজনের নামে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে বলে চীন অভিযোগ করেছে।
ঢাকায় সরকারি সূত্রগুলো বলছে, গণতন্ত্র সম্মেলন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ অবগত। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না পেলেও ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়ার আশা করছে।