<p>সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে এসে পোষা বিড়াল ‘লিও’কে হারিয়ে ফেলেছিলেন জার্মান নারী জুলিয়া ওয়াসিমান। এরপর কেটে যায় দেড় মাস। এর মধ্যে পাঁচবার প্রিয় লিওর খোঁজে তাহিরপুরে আসেন জুলিয়া। করেন মাইকিং। লিওর ডাক ও নিজের কথা রেকর্ড করে বাজান রাস্তায় রাস্তায়। কিন্তু লিওকে পাননি। প্রতিবারই অশেষ মনঃকষ্ট নিয়ে ঢাকায় ফিরে যান তিনি। অবশেষে জুলিয়ার কষ্টের অবসান হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি ফিরে পেয়েছেন লিওকে। এ সময় লিওকে কোলে জড়িয়ে চুমায় চুমায় ভরিয়ে দেন তিনি। আর ‘মায়ের কোল’ ফিরে পেয়ে চুপটি করে বসেছিল লিও।</p> <p>গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাহিরপুর থানা পুকুরের পারে একটি বিড়াল দেখতে পান স্থানীয় যুবক রতন রায়। তিনি বিড়ালটিকে ধরেন। এ সময় বিড়ালটির কামড়ে তিনি আহতও হন। পরে তিনি বিড়ালটিকে বাড়িতে নিয়ে খাঁচায় রেখে জুলিয়ার দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে বিড়ালটির ছবি পাঠান। জুলিয়া নিশ্চিত হন এটি তাঁরই লিও। সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে গতকাল সকালে তাহিরপুরে এসে পৌঁছান তিনি। পরে লিওকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর আগে জুলিয়া জানান, তিনি লিওকে দেখার আকুলতায় সারা রাত তাঁর চোখের পাতা এক করতে পারেননি। উপস্থিত লোকজন পোষা প্রাণীর প্রতি একজন বিদেশিনীর দরদ দেখে অবাক হন। জুলিয়ার খুশিতে তাঁরাও খুশি।</p> <p>জুলিয়া ওয়াসিমান স্থানীয়দের জানান, তিন বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে আছেন। এখানে তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। ঢাকায় আসার পর তিনি বাংলাদেশি একটি বিড়ালছানা সংগ্রহ করে পোষেন। এটির নাম দেন লিও। লিও তাঁর বশ মানে। লিওই তাঁর একাকিত্বের সঙ্গী। প্রিয় বিড়ালটি নিয়ে দেড় মাস আগে একটি পেশাদার পর্যটক সংগঠনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসেন জুলিয়া। হাওর-পাহাড় ঘুরে এক দিন পর ফেরার পথ ধরেন তিনি। কিন্তু তাহিরপুর উপজেলা সদরের মেশিনবাড়ী ঘাটে এসে লিওকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেন। পরে অন্য পর্যটকদের তাড়ায় সজল চোখে ঢাকায় ফিরে যান। এরপর লিওর খোঁজে পাঁচ দিন তিনি তাহিরপুরে আসেন। সব শেষ ১৩ নভেম্বর সকালে এসে উপজেলা সদরে মাইকিং করিয়ে লিওর সন্ধান চান। মাইকে লিও ও জুলিয়ার ধারণ করা কণ্ঠও বাজানো হয়। স্থানীয় মানুষের মধ্যে জুলিয়ার আহবান সাড়া ফেলে। অনেকে খুঁজতে থাকেন লিওকে।</p> <p>বিড়ালের সন্ধানদাতা রতন রায় বলেন, ‘আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিদিন কত কত পর্যটক আসেন। তাঁদের অনেকে হাওরের জীববৈচিত্র্যও নষ্ট করেন। আমাদেরও অনেকে প্রকৃতির সুন্দর প্রাণী পাখি শিকার করেন। কিন্তু একজন বিদেশি নারী একটি পোষা বিড়ালের জন্য মূল্যবান সময় ব্যয় করে একাধিকবার দুর্গম গ্রামে এসে সন্ধান করে গেছেন! এ ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, জুলিয়া কত ভালো মানুষ। বিড়ালটি তাঁর হাতে তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’</p> <p>স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও পরিবেশকর্মী অনুপম রায় বলেন, ‘আমরা মহাবিপন্ন প্রাণী হাতিকে মেরে ফেলছি। কিন্তু জুলিয়া একটি বিড়ালের জন্য যে ভালোবাস দেখিয়েছেন, তা থেকে আমাদের শেখা উচিত।’</p> <p>লিওকে উদ্ধারকারী দলের একজন মধ্য তাহিরপুর গ্রামের সমাজকর্মী জয় রায় (২৫) বলেন, ‘লিওকে পেয়ে জুলিয়ার চোখে-মুখে যে আনন্দ দেখেছি তাতে আমরাও খুশি। লিওর কামড়ে আহত রতন রায় একটি ভ্যাক্সিন নিয়েছেন। বিড়ালটি উদ্ধারে রতনের ভূমিকাই প্রধান।’</p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, ‘প্রাণীর প্রতি জার্মান নারীর এ ভালোবাসা থেকে আমাদেরও শেখার আছে।’</p> <p>স্থানীয় যুবক ফয়সাল হাওড়ী বলেন, ‘আমরাও জুলিয়ার বিড়ালের সন্ধানের জন্য কাজ করি। বিড়ালের সন্ধানে যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, তিনি সবাইকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।’</p> <p>তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, স্থানীয় গাইডের সহায়তায় গতকাল সকালে জুলিয়া বিড়ালটি নিয়ে ফিরে গেছেন।</p>