<p>ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ। বাক্যটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবুজ ঘাসের কার্পেটে ঢাকা বিশালাকার খোলা স্থানের দৃশ্য। মাঠের চারদিকে সবুজ গাছগাছালি। উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরছোঁয়া খোলা অংশ থেকে মাঠে ভেসে আসে নির্মল বাতাস। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে চলে তরুণ-যুবাদের খেলা। চারদিকের পাকা সড়কে পথচারীর চলাচল। ঘোরাঘুরি, খেলার সুযোগ, বাতাসের শীতল প্রাণজুড়ানো পরশ আর মায়াবী দৃশ্যের কারণে ময়মনসিংহবাসীর কাছে বড় আগ্রহ, পছন্দের এই মাঠ। মাঠটি নিয়ে গর্ব অনুভব করে তারা।</p> <p>ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠের বড় অবদান হলো শহরের খেলাধুলাতে এর ব্যবহার। দীর্ঘকাল ধরে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলার প্রধান স্থান এটি। নগরের সেরা খেলোয়াড়রাও এখানে নিয়মিত খেলেছেন। বহু আগে থেকেই পাড়া-মহল্লার ছেলেরা দল বেঁধে খেলতে আসে। নগরে বড় হওয়া তরুণ-যুবকদের প্রায় সবারই খেলার কারণে জীবনের কোনো একসময়ে পা পড়েছে এ মাঠে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ক্রীড়ানুষ্ঠানও হয় এখানে। পাশেই আবুল মনসুর আহমেদ সড়ক ছুঁয়ে অবস্থান নগরের সুপরিচিত ক্লাবঘরগুলোর। ক্লাবগুলোর অনুশীলনও চলে এই মাঠে। এখানে আসেনি এমন মানুষ জেলায় খুঁজে পাওয়া ভার।</p> <p>বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশেরও প্রধান স্থান সার্কিট হাউস মাঠ। সেই পাকিস্তান আমল থেকে এখানে জনসভা করেছেন দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিশেষ করে সরকারপ্রধানদের জনসভা হলে মাঠটির বিকল্প নেই। বড় সুবিধা হলো, নগরের কাচিঝুলি ও কাছারিঘাট এলাকা এবং টাউন হল মাঠসহ বিভিন্ন স্থান দিয়ে সার্কিট হাউস মাঠে যাওয়া-আসা করা যায়। চারপাশের পাকা সড়কে গাছের ছায়ায় হেঁটে চলাও নগরবাসীর কাছে বড় আনন্দের। উদার প্রকৃতির ছোঁয়া পথিকের মনকে প্রশান্ত করে তোলে। মাঠের উত্তর-পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের অংশে এসে সজীব নিঃশ্বাস নেয় অনেকেই। একদিকে খোলা মাঠ আর আরেক দিকে নদের খোলা হাওয়ায় দেহ-মনের ক্লান্তি দূর হয় নিমিষেই।</p> <p>প্রবীণ সাংবাদিক এবং বৃক্ষপ্রেমিক এ এইচ এম মোতালেব বলেন, খেলাধুলায় এ মাঠটি বলতে গেলে শহরের একমাত্র মাঠ। প্রকৃতির স্পর্শে এমন বড় মাঠ দেশে আর কোথাও আছে কি না সন্দেহ। ময়মনসিংহের কবি এবং বিশিষ্ট গবেষক ফরিদ আহমেদ দুলাল বলেন, ‘যে মাঠের বিস্তৃত সবুজ আমাদের ডাকে সুস্বাস্থ্য পানে, অগণন বালক-যুবা কসরত করে আগামী টানে, যে মাঠ গৌরব দেয় ঐতিহ্য-সম্মানে, স্মৃতিময় সে মাঠের নাম সার্কিট হাউস মাঠ।’</p> <p>কবে এ মাঠটির সৃষ্টি, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য কারো কাছে নেই। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, এ জনপদের সৃষ্টির সময়ও মাঠটির অস্তিত্ব ছিল। একসময় স্থানটি ছিল আরো নীরব পরিবেশের, আরো বড় আয়তনের। এ কারণেই মাঠটির আশপাশে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন গড়ে ওঠে।</p>