<p>করোনায় আক্রান্ত হয়ে কয়েক দিন আগে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন মজিবুর রহমান (৫৫)। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালের করোনা ইউনিট ২২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দুই দিন হলো তাঁর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে; কিন্তু শ্বাসকষ্টের কারণে এখনো তাঁকে ওই ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে। একই ওয়ার্ডে আছে আরো জনাত্রিশেক রোগী। তাদের বেশির ভাগই করোনায় আক্রান্ত। কেউ বা করোনা সন্দেহে চিকিৎসাধীন।</p> <p>সরেজমিনে গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ১৭ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রোগীর সেবায় ব্যস্ত এক নারী। অথচ তাঁর মুখে মাস্ক নেই। অথচ রাজশাহীতে হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিলও যেন কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। দিনে গড়ে সাতজনের বেশি রোগী মারা যাচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল মারা গেছে আটজন। তাদের মধ্যে চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং চারজন করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিল একই ওয়ার্ডে।</p> <p>এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত বলে সন্দেহজনক রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য গতকাল সকালেই হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফল আসতে কমপক্ষে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় লাগার কথা; কিন্তু এর আগেই ওই সব রোগীকে করোনা ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়। এ অবস্থায় সংক্রমণের বাইরে থাকা রোগীরাও আক্রান্ত হওয়ার চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমনকি করোনা ওয়ার্ডে রোগীর স্বজনরাও অবাধে যাতায়াত করছে। ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়া নিয়ে হাসপাতালজুড়ে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।</p> <p>গত শুক্রবার সন্ধ্যায় করোনা ল্যাবে পাওয়া তথ্য মতে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে নতুন করে ১৩১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত দু-তিন দিনের মধ্যে তারা করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসে একই ওয়ার্ডে ছিল। এর আগের দিন রাজশাহী বিভাগে নতুন করে ২৮৮ জন রোগী শনাক্ত হয়।</p> <p>অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে গতকাল এক দিনে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাবিবুল্লাহ তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের রাজশাহীতে তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছয়জন, বগুড়ায় একজন এবং নাটোরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগের আট জেলায় মোট ৫৯২ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৩ জন মারা গেছে রাজশাহীতে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫১, নওগাঁয় ৪৫, নাটোরে ২৭, জয়পুরহাটে ১২, সিরাজগঞ্জে ২৪ এবং পাবনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।</p> <p>রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘যে হারে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছে, সেই হারে এখন চিকিৎসক ও নার্স নেই। অন্যান্য সুবিধা দিতেও আমাদের হিমিশিম খেতে হচ্ছে। তার পরও আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে বেশির ভাগ রোগীই আসছেন খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে। এ কারণে মৃত্যুর হার বাড়ছে।’</p> <p>উপপরিচালক আরো বলেন, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনা রোগীদের সেবায় ২৩২টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল পর্যন্ত রোগী ছিল ২২৪টিতে। তাদের বেশির ভাগই করোনায় আক্রান্ত। বাকি কিছু রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।</p> <p>হাসপাতালের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন নূর হোসেন বলেন, ‘আমার রোগী প্রথম দফায় করোনা পজিটিভ ছিল। দুই দিন আগে দ্বিতীয় দফায় নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তার পরও তাকে করোনা পজিটিভ রোগীর সঙ্গেই থাকতে হচ্ছে। ঝুঁকি সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই রোগীর পাশে থাকতে হচ্ছে স্বজনদের। কারণ রোগীর সেবা দেওয়ার মতো তেমন কোনো নার্স বা চিকিৎসক থাকছেন না।’</p> <p>বাইরে থেকে রোগীর স্বজনরাও দর্শনার্থী হয়ে প্রবেশ করছে ওয়ার্ডে। ফলে তারাও ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এমনকি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য ওয়ার্ডগুলোর রোগী ও তাদের স্বজনরা এসব দর্শনার্থী এবং করোনা রোগীকে সেবাদানকারীদের কারণে ঝুঁকিতে পড়ছে।</p> <p>হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসকরা রোগীদের সেবায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের পাশে নার্সরা বসে সেবা দিচ্ছেন সার্বক্ষণিক। আইসিইউয়ের ১৭টি শয্যা গতকাল রোগীতে পূর্ণ ছিল।</p> <p>নতুন ওয়ার্ড চালু হচ্ছে : রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ সামাল দিতে আরো একটি নতুন ওয়ার্ড চালু করা হচ্ছে। হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিটে পরিণত করার সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, দুজন শ্রমিক অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ করছেন। অন্য শ্রমিকরা শয্যাগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহের পাইপলাইন প্রস্তুত করছেন।</p>