এক মাস পর রাজধানীসহ দেশের সব জেলার সড়কে ফিরেছে গণপরিবহন। আর গণপরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর সড়কে ফিরেছে চিরচেনা যানজটও। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি অনেকাংশেই উপেক্ষিতই ছিল। তার পরও যাত্রীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি।
রাজধানীতে চেনা যানজট স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত
- ♦ গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন
- ♦ যাত্রীরা বলছে, পকেটের টাকা তো বাঁচল
সজিব ঘোষ

গতকাল বৃহস্পতিবার গণপরিবহন খুলে দেওয়ার প্রথম দিন অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ ভাড়া আদায় করা হলেও বাসে ওঠার সময় ছিল না যাত্রীদের হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা। বহু বাসে দাঁড়া করিয়েও যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। ঘোড়ার গাড়ি ও হিউম্যানহলারের (লেগুনা) মতো যানেও পাঁচজনের আসনে চারজন বসিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর পর ব্যক্তিগত পরিবহন ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঠিকই চলেছে। অনেক অফিসও খোলা ছিল।
চলতি মাসের শুরুর দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা।
গতকাল গণপরিবহন খুলে দেওয়ার প্রথম দিন রাস্তায় মানুষের চলাচল বেড়েছে, কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী বিধি-নিষেধ অনেকাংশেই মানা হয়নি।
রাজধানীর গুলিস্তান, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, পল্টন, মগবাজার, মালিবাগ, বাড্ডা, সদরঘাট, রামপুরা, মহাখালী, ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে বাসে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও দুপুরের দিকে সেই চাপ কিছুটা কমে আসে। বিশেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য সকালে যারা রাস্তায় বের হয়েছে, তারাই বাসের জন্য অপেক্ষা করেছে। বিকেলের পর থেকে সেই চাপ আবারও বাড়তে থাকে, সঙ্গে যানজটও। নিউ মার্কেট ও গুলিস্তানের মতো মার্কেটমুখী সড়কে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ সারা দিনই ছিল সমান তালে।
গণপরিবহনে বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকলেও চালক ও তাঁদের সহযোগীর মুখে মাস্ক কমই দেখা গেছে। পাশাপাশি সব আসনে যাত্রী পরিবহনের ঘটনাও ঘটেছে। তদারকির কেউ ছিল না।
সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের বাসটি যাচ্ছিল গাজীপুর। দুপুর ১টায় ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজটে আটকে থাকা বাসে বেশ কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হেল্পার জালাল বলেন, ‘দুই সিটে এক যাত্রী বসানোর কথা, ওইডা ঠিক আছেনি দেহেন। সামনেই কয়েকজন নাইমা যাইব, তহন আবার এরা বইব। এডারে দাঁড়াইয়া যাত্রী নেওয়া কয় না।’
ভিআইপি ২৭ পরিবহনের বাসচালক রহমান মিয়া বলেন, ‘যত যা-ই কন, সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মানা তো মুশকিল। বাসে ওঠার সময় বা নামার পরে যাত্রীদের দূরত্ব কই থাকে।’ হাতে জীবাণুনাশক দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকেই তো প্রথম বাস চালু হইছে। তাই সব গুছাইতে পারি নাই। কাইল থাইক্কা ব্যবস্থা থাকবে।’
অন্য দিনের তুলনায় গতকাল গণপরিবহন চলার শুরুর দিন যানজটও দীর্ঘ হয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন মো. সালাউদ্দিন। প্রতিদিনের মতো গতকালও তিনি আজিমপুর থেকে বাড্ডায় কর্মস্থলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ বাস নামবে, এটা আমি জানতাম। সে জন্য বাসা থেকে সকাল সকাল বেরিয়েছি। কিন্তু পথে পথে যানজটের যে অবস্থা দেখলাম আমার গুলশানে আসতেই দেড় ঘণ্টার বেশি লেগে গেছে।’
সড়কে দীর্ঘ যানজট ও অতিরিক্ত ভাড়ার পরও খুশি অনেক যাত্রী। ফার্মগেটে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শিহাব আহাম্মেদ বলেন, ‘যানজট প্রতিদিনই থাকে। আজকে না হয় একটু বেশিই থাকল। তার চেয়ে বড় কথা হলো পকেটের টাকা বাঁচল। এই কয় দিন রীতিমতো সিএনজিওয়ালার পায়ে ধরে ভাড়া কমাইতে হইছে।’
আরেক যাত্রী সাইফুল্লাহ রুমান বলেন, ‘করোনা তো মনে হয় না রাতারাতি যাবে। এখন কেউ যদি এত মৃত্যুর খবর শুনেও সামান্য মাস্ক না পরে তাইলে তারে কিভাবে বোঝাবেন? যে যার মতো বোঝা উচিত। প্রত্যেকের অন্তত নিজের সুরক্ষার কথা ভাবা উচিত। আমি নিজে নিরাপদে চলার চেষ্টা করি। যেহেতু বাসা থেকে বের হতেই হবে, তাই বাস চালু হওয়ায় আমি খুশি।’
সম্পর্কিত খবর

বর্ষায়ও হাতিরঝিলের পানি দূষণ


জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ দেশব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ রবিবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘পিপল হু ফট ফর আস’ ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : স্টোরি অব মুশতাক আহমদ’সহ জুলাইয়ের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঢাকায় মিরপুর-১০ ও বছিলায় শহীদদের স্মরণে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে। গতকাল শনিবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, আজ ২০ জুলাই ‘গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দিবস’ স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’। কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন ‘একটি শহিদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৬ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

আদিলুর রহমান খান
ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে মানুষকে ঢাকাকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোর ভালো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে মানুষ কাজের জন্য ঢাকা এলেও, কাজ সেরে ফিরে যেতে পারছে না।
গতকাল শনিবার বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকায় নিম্নবিত্তের সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন’ শীর্ষক এক বিশেষ ডিজাইন-গবেষণা উপস্থাপনা ও আলোচনায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্লট ও ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা বাতিল করেছে সরকার। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে রাজউক থেকে লটারির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হাতে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আদিলুর রহমান খান।
উপদেষ্টা বলেন, নতুন করে যেন বাংলাদেশে কখনোই আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।

শিক্ষাঙ্গন
