রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারে একটি তরমুজের দোকানে গত শুক্রবার দুপুরে গিয়ে পাঁচজন ক্রেতা দেখা যায়। মিনিট পাঁচেক দেখেশুনে দরদাম করে কিনলেন মাত্র একজন। কারণ বিক্রেতা দাম কমাবেন না আর ক্রেতা বলছেন দাম অনেক বেশি। দাম বেশি, এটা বাজার ঘুরেও দেখা গেল।
তরমুজে খুশি চাষি তবে দাম বেশি
- বিক্রেতারা বলছেন, হঠাৎ জোয়ারের প্রভাবে জোগান কম
রোকন মাহমুদ

বিক্রেতা জানে আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, আট কেজি ওজনের তরমুজ কেনা হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়।
রাজধানীর প্রতিটি বাজারেই ১০ থেকে ১৫টি তরমুজের দোকান দেখা গেল।
এই অবস্থায় নিম্নবিত্ত তো বটেই, অনেক মধ্যবিত্তও তরমুজ কেনা ছেড়ে দিয়েছে। মুগদা বাজারে সকালে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ প্রায় সাড়ে সাত কেজি ওজনের একটি তরমুজের দরদাম করছিলেন। বিক্রেতা ২১৫ টাকার নিচে নামছেনই না। শেষে ভেবেচিন্তে না কিনেই ফিরে গেলেন আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘যে টাকায় তরমুজ কিনব, সেই টাকায় প্রায় চার কেজি চাল পাব। চাল কেনাটা জরুরি।’
মুগদা বাজারের বিক্রেতা শাহেব আলী বলেন, ঢাকায় তরমুজ আসে মূলত পটুয়াখালীসহ কয়েকটি অঞ্চল থেকে। ওই সব এলাকায় হঠাৎ জোয়ারের পানিতে তরমুজক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তরমুজের জোগান কম। তবে বাজারে তরমুজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক ভালো দাম পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ বছর তরমুজের ফলনও ভালো হয়েছে বলে মৌসুমের শুরুতে খবর পাওয়া যায়। সে হিসাবে কৃষক তরমুজ চাষে লাভবান হয়েছেন। গত বছরের চেয়ে এবার তরমুজের উৎপাদন বেশি হবে বলে আশা করছেন চাষি ও কৃষিবিদরা।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সাজির হাওলা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হাওলাদার তিন একর জমিতে এ বছর তরমুজ চাষ করেছেন। তাঁর ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষেত বিক্রি করেছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এই কৃষকের মুনাফা হয়েছে এক লাখ টাকা। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তিন বছর ধরে তরমুজ চাষ করি। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি লাভ হয় না, কিন্তু ফলন ভালো হয়। এ বছর লাভ ভালো হয়েছে, তবে ব্যবস্থাপনার ঘাটতি না থাকলে লাভ আরো বেশি হতো।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন। এ সময় ৩০ হাজার একর জমিতে তরমুজ চাষ করেন কৃষকরা। তবে গত বছর সাধারণ ছুটি থাকায় তরমুজের বিক্রি ছিল খুবই কম। এর আগের বছর উৎপাদন ছিল এক লাখ ৮৭ হাজার টন।
বাউফল উপজেলার চরশৌলা এলাকার মো. ফরহাদ হোসেন টিক্কা ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করে ৮০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছেন। নিজের মূলধন আট লাখ টাকা। ১৫ লাখ টাকা সুদি মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া দোকান থেকে বাকিতে নিয়েছেন সার ও কীটনাশক। মহাজনকে লাখে ৩০ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। প্রায় অর্ধকোটি টাকা লাভ হতো। কোটি টাকার ফলনও হয়েছিল। কিন্তু সব ভেসে গেছে পূর্ণিমার জোয়ারে। এখন ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা বিক্রি নামবে তাঁর। সর্বস্ব শেষ হয়ে গেছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরহাদ। তিনি বলেন, তরমুজ চাষ লাভজনক। স্বপ্ন নিয়ে কৃষকরা তরমুজ আবাদ করেন, কিন্তু সরকারের কোনো ব্যবস্থাপনা না থাকায় সব স্বপ্ন জোয়ারে ভাসিয়ে নেয়। পটুয়াখালীর শতাধিক কৃষক পূর্ণিমার জোয়ারে সর্বস্ব হারিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। ফলনও সন্তোষজনক, লাভও বেশ ভালো হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালের কণ্ঠ’র পটুয়াখালী প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল এবং রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি এম সোহেল।]
সম্পর্কিত খবর

প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ
চার দফা দাবি না মানলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে টানা অনশন
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, পদোন্নতিসহ চার দফা দাবিতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গতকাল শুক্রবার মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চার দফা দাবি পূরণ করা না হলে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা টানা অনশন কর্মসূচি পালন করবেন। কোথাও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না।
গতকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকরা। সকাল ১১টার দিকে এই মহাসমাবেশ শুরু হয়।
দুপুর ২টার দিকে মহাসমাবেশের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সভাপতি মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জেনেছি, রিট করা ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য দশম গ্রেড বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তাহলে যাঁরা মামলা করেননি, তাঁদের জন্য কবে দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হবে? আমরা চাই, দেশের সব প্রধান শিক্ষক যেন সমানভাবে দশম গ্রেড পান। সহকারী শিক্ষকদের জন্য কনসালটেশন কমিটি ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব দিয়েছে, অথচ আমাদের দাবি হচ্ছে ১১তম গ্রেড।’
প্রাথমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি হচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন-ভাতা প্রদান; ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে সব প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেডে পদোন্নতির সরকারি আদেশ (জিও) জারি; চলতি দায়িত্বে থাকা সিনিয়র শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিতকরণ এবং চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।

জুলাই শহীদ রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা
শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে গণতান্ত্রিক-বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে : সিপিবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

চব্বিশের গণ-আন্দোলনের সময় ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ সময় সিপিবি নেতারা বলেন, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উত্তরা থানা কমিটির সদস্য শহীদ রিজভী স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

শহীদ মুগ্ধর বাবা
জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার স্বাদ মানুষ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে পেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এডাস্ট) অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সংক্ষিপ্ত
ঢাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রতীকী ম্যারাথন
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই যোদ্ধাসহ আন্দোলনে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে এক প্রতীকী ম্যারাথন গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই ম্যারাথন আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এক হাজার প্রতিযোগী নিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রতীকী ম্যারাথনটি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে গণভবন, সংসদ ভবন, খামারবাড়ি হয়ে আবারও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসে শেষ হয়।