প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। এ ভাষণই ছিল প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা। এ ভাষণেই স্বাধীনতার সার্বিক নির্দেশনা ছিল।
‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ’-এর ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দেন।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দিতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যখন ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল, তখন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ আসে বঙ্গবন্ধুর বজ ঘোষণা, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সমাবেশে সেই ভাষণের পর থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই পরিচালিত হতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভাষণের ভেতরে আপনি তিনটা স্তর পাবেন। একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে যে বাঙালির বঞ্চনার ইতিহাস, অত্যাচার-নির্যাতনের ইতিহাস। তখনকার বর্তমান অবস্থাটা, কিভাবে সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা গুলি করে মানুষকে হত্যা করেছে, কিভাবে মানুষ ভোট দিয়েছে। তাদের সেই অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করছে সেই বঞ্চনার ইতিহাস। সেই তখনকার নির্যাতনের ইতিহাস তিনি বলছেন। আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার সকল নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কারণ একটা গেরিলা যুদ্ধ হবে, সেই গেরিলা যুদ্ধ হতে হলে কী কী করতে হবে, সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা থেকে শুরু করে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে বলেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন, যে মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা বাস্তবে অফিশিয়ালভাবে দেবেন, সেই মুহূর্তে হয়তো তিনি বেঁচে না-ও থাকতে পারেন। সেই জন্য তাঁর এই ঐতিহাসিক ভাষণের ভেতরেই কিন্তু তিনি স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিয়ে গেলেন।’
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’—ভাষণে এই কথাটি বঙ্গবন্ধুর দুইবার উচ্চারণের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থাৎ এটা যে স্বাধীনতার সংগ্রাম আর এই যুদ্ধটা যে স্বাধীনতাযুদ্ধ হবে, সেই কথাটাই কিন্তু তিনি স্পষ্ট বলে গেছেন। কাজেই এটা একদিক দিয়ে বলতে গেলে ৭ই মার্চই তো প্রকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা।’
এই ঘোষণার পর থেকে পূর্ববঙ্গ কিভাবে চলবে, জাতির পিতার সেই নির্দেশনা দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ কোনো লিখিত ভাষণ দেননি। তাঁর জীবনের সমস্ত সংগ্রামের যেই অভিজ্ঞতা এবং তাঁর বাঙালি জাতিকে নিয়ে যেই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু তিনি এই ভাষণটা দিয়েছিলেন, আর এই পরামর্শটা আমার মা-ই দিয়েছিলেন।’
ঐতিহাসিক সেই ভাষণ দেওয়ার আগে অনেকের অনেক ধরনের পরামর্শ ছিল, যা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “তখন আমাদের ছাত্রনেতাদের অনেকে...নাম বলতে আপত্তি নেই। যেমন— সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাকসহ, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক ছাত্রনেতা ৩২ নম্বরে এসেছেন। সিরাজুল আলম খান খুব বারবার জানতে চাইছিল যে আজকেই স্বাধীনতার ঘোষণাটা দিতেই হবে। সেই সময় অনেক অনেক বুদ্ধিজীবী লিখতেন, পয়েন্ট দিয়ে দিয়ে যেতেন আবার কেউ পরামর্শ দিয়ে যেতেন যে কী করে বলতে হবে, কী বলতে হবে। সিরাজুল আলম খানকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একটা কথা বারবার আমার কানে এখনো বাজে। বলেছিলেন, ‘সিরাজ, লিডার শুড লিড দ্য ল্যাড। ল্যাড শুড নট লিড দ্য লিডার। কী করতে হবে আমি জানি। তোমরা তোমাদের কাজ করো। যাও।’”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সংস্কৃতিসচিব বদরুল আরেফীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য