প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা মা-বাবা ও স্বামীর সম্পত্তির অংশ পান না এবং তাঁরা যদি কিছু অংশ পানও, তা কোনোভাবেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সমান নয়। এ অবস্থায় সম্পত্তিতে হিন্দু নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে ‘খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০’ উপস্থাপন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ওয়েবিনারে খসড়া আইনটি উপস্থাপন করা হয়।
হিন্দু নারীদের বৈষম্যমূলক অবস্থা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এরই ধারাবাহিকতায় ‘হিন্দু আইন প্রণয়নে নাগরিক উদ্যোগ’ নামক কোয়ালিশন একটি খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করে। এমজেএফ এই কোয়ালিশনের সচিবালয়।
সাতটি বিভাগীয় শহরে হিন্দু আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি ও সনাতন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাঁদের মতামত খসড়া আইনে যুক্ত করা হয়। এতে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ ও হিজড়াদের (তৃতীয় লিঙ্গ) সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
অবশ্য কারো নিজের অর্জিত সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে তার সম্পত্তি হবে এবং কোন কোন ব্যক্তি সম্পত্তির উত্তরাধিকারের যোগ্য হবেন না, সে বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, কারো ছেলেসন্তান থাকলে মেয়েসন্তানরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পায় না। তবে ছেলে না থাকলে ছেলে রয়েছে এমন মেয়েরা মৃত মা-বাবার সম্পত্তির অংশ পাবেন। যদিও নারীর অর্জিত সম্পত্তির অংশ তার পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ঠিকই পেয়ে থাকে।
বাংলাদেশের সংবিধানের (১৯৭২) ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ ১৯৭৯-এ বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষর করে, যেখানে নারীর অধিকার, ভোগ ও চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার কথা বলা হয়েছে। অথচ সম্পত্তিতে সমান অধিকার না থাকার কারণে হিন্দু নারীরা বিভিন্নভাবে বঞ্চনা, বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
ওয়েবিনারে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সভাপতিত্বে এমজেএফের পরিচালক রীনা রায়, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক নীনা গোস্বামীসহ অন্যরা অংশ নেন। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ।