আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই টিকা নেবেন। তবে টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখনো করোনার টিকা পায়নি। আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছিলাম বলেই টিকা আনতে পেরেছি এবং মানুষ তা গ্রহণ করছে।’
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে আয়োজিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই করোনাভাইরাস কত দিন থাকবে এবং টিকার কার্যকারিতা কত দিন থাকবে, তা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলুন। সবাই মাস্ক পরবেন এবং সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোবেন। ইনশাআল্লাহ, এই মহামারি থেকেও আমরা মুক্তি পাব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মাতৃভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। দেশের প্রতিটি অর্জনেই বাঙালি জাতিকে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেব। দেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত এবং প্রতিটি মানুষের জীবনকে উন্নত ও অর্থবহ করব, একটি মানুষ ঠিকানাহীন থাকবে না, প্রত্যেকের ঘরে আলো জ্বালব—এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রেখেছি। এটা শুধু আমাদের নয়, সারা পৃথিবীতে যাদের মাতৃভাষা আছে, তাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য ও তার ওপর যেন গবেষণা হয় তার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। সবচেয়ে দুঃখের কথা, যখন এটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম তখন জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন কফি আনান, তাঁকে নিয়েই এটা করেছিলাম। আমরা নির্মাণকাজ শুরুও করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর এটার নির্মাণকাজ শেষ করি। আজ সেখানে আমরা ভাষা জাদুঘরও করেছি। সেখানে আর্কাইভ করা আছে। বিভিন্ন মাতৃভাষার নমুনা সংগ্রহ করে সেখানে রেখেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিন্তু একটা মহান দায়িত্ব পড়ে গেছে সারা বিশ্বের ছোট-বড় যেমনই হোক ভাষাভাষী আছে, যেগুলো মাতৃভাষা সেগুলো সংরক্ষণ করা। সেগুলো সেখানে রাখা এবং গবেষণার সুযোগ করে দেওয়া। একটা এত বড় ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলা হয়েছে মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য। আর কোথাও কিন্তু এভাবে রাখার দৃষ্টান্ত নেই। কাজেই সেটুকু আমরা করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্ট সংগ্রহ করে তার তথ্যের ভিত্তিতে ‘সিক্রেটস ডকুমেন্টস অব শেখ মুজিব’ খণ্ডগুলো দীর্ঘ ২০ বছর পরিশ্রম করে বই আকারে প্রকাশ করার কথা তুলে ধরেন। বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিত এসব রিপোর্ট ভালো করে পড়ার জন্য দলের নেতাকর্মীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লেখা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এসব রিপোর্টে ভাষার জন্য বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামসহ কী কী করেছেন সব সত্য ইতিহাস লেখা রয়েছে। এর ভেতর থেকে সত্য ইতিহাসের মহামূল্যবান তথ্য সবাই জানতে পারবেন। ভাষার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের সত্য ইতিহাস জানতে হলে এসব রিপোর্ট পড়তে হবে।
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে সভায় সূচনা বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মন্তব্য