<p>বাতাস, পানি, খাদ্য, বাসস্থান—এ সবকিছুর ওপরই পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বলছে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বড় একটা অংশ পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ‘লাইফ অন ল্যান্ড’ (এসডিজি-১৫) অর্জনের মূল কাজ হলো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।</p> <p>বায়ুমণ্ডলের কার্বন শোষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কাঠের চাহিদা পূরণে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এলাকায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেও বৃক্ষরাজি মানবজীবন ও সহায়-সম্পদ রক্ষা করে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের বৃক্ষরোপণের কর্মযজ্ঞে সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)।</p> <p>১৯৮০ সালে শুরু হওয়া বিএটিবির ‘বনায়ন’ প্রকল্পটি ৪০ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি প্রায় ১১ কোটি গাছের চারা বিনা মূল্যে বিতরণ ও রোপণ করেছে। চার দশকের সুদীর্ঘ পথচলায় ‘বনায়ন’ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।</p> <p>স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে মিলে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক-মহাসড়কের দুই পাশে সবুজায়নের কাজ করে আসছে ‘বনায়ন’। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শুধু বান্দরবানের লামা-আলীকদম সড়কেই প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় সবুজায়নের কাজ করে প্রকল্পটি। এর ফলে সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি পাহাড়ি রাস্তার মাটিক্ষয় কমে আসে। এর ফলে সেখানে ভূমিধসের আশঙ্কাও অনেক কমে যায়। দুই বছর ধরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগর বনায়ন কর্মসূচিতে ‘বনায়ন’ ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতা করে আসছে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে কুষ্টিয়ার জি-কে ক্যানেল, কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক এবং কুষ্টিয়া বাইপাস সড়কেও একই রকম কাজ করছে ‘বনায়ন’। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের সহায়তায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে প্রকল্পটি।    </p> <p>চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যশোর বিমানবন্দরসহ দেশের অন্যান্য বিমানবন্দর এলাকায় গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করছে ‘বনায়ন’। বাংলাদেশ বন বিভাগ, সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ অংশীদারিত্বে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় বড় সেতু এলাকায় সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনও করছে প্রকল্পটি। কক্সবাজার, রামু, উখিয়া ও আশপাশের এলাকায় হারিয়ে যাওয়া বনায়ন পুনঃ স্থাপন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় তিন বছর ধরে দেড় লাখেরও বেশি গাছের চারা রোপণ করেছে ‘বনায়ন’।</p> <p>মুজিব শতবর্ষ ও বনায়ন প্রকল্পের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এরই মধ্যে দেশজুড়ে ৫০ লাখেরও বেশি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ভাসানচর রক্ষায় নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে বৃক্ষরোপণ করছে ‘বনায়ন’ প্রকল্প।</p> <p>এ ব্যাপারে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) ও পরবর্তীকালে আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইশতিয়াক উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘বিএটিবি বনায়ন প্রকল্প দেশের বৃক্ষাচ্ছাদনের পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ও সহায়ক কর্মসূচি। জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার, ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ, মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখা, পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা ও বন্য প্রাণীর আবাস সংরক্ষণে প্রকল্পটির কার্যকরী ভূমিকা অনস্বীকার্য।’</p>