চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেলের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ছবিটি পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পে দিন-রাত সমানে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে একটির বোরিং ও রিং বসানোর কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার এই মেগাপ্রকল্পের ৬০ শতাংশের বেশি কাজ দৃশ্যমান। অন্য টিউবের কাজ ১০ ডিসেম্বর শুরুর কথা রয়েছে। বহুপ্রতীক্ষিত এ টানেলের মধ্য দিয়ে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ হচ্ছে চট্টগ্রাম। সব মিলিয়ে স্বপ্নের এ টানেলের কাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় টিউবের খনন ও রিং বসানোর কাজ শুরু হবে। এই টিউব বোরিংয়ের কাজ শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগতে পারে। প্রকল্পের কাজ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে সেটি অব্যাহত থাকলে নির্ধারিত মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই তা শেষ হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে নির্মাণ করা প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় টিউব। প্রথম টিউবের মতো দ্বিতীয় টিউবও স্থলভাগ থেকে নদীর দিকে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে মাটির গভীরে যাবে। আবার নদী থেকে উপকূলে ওঠার সময় ধীরে ধীরে উঠে আসবে। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টিউব। ফলে নদীর প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না। ৩.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। চার লেনের এ টানেলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলবে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর একটি টিউবের বোরিং নির্মাণ কাজ তিন মাস আগে শেষ হয়। টানেলের অন্য টিউবের বোরিং নির্মাণ কাজ শুরু হবে আনোয়ারার অংশ থেকে। এটি এসে নগরের পতেঙ্গায় শেষ হবে।
এদিকে এ টানেল সড়কের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। চট্টগ্রাম নগরকে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারার সঙ্গে যুক্ত করবে। এই বহুমুখী রোড টানেল প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেল এবং চীনা কম্পানির তৈরি প্রথম বড় ব্যাসের নদীগর্ভস্থ টিবিএম টানেল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ টানেল প্রকল্প নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামে পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান হবে।
নগরের পতেঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ টানেল হবে হবে বলা হচ্ছিল, এখন তা বাস্তব। টানেল ঘিরে এখানে জায়গার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। নদীর দুই পারে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এখানে অনেক কর্মসংস্থান হবে। যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে।
প্রকল্পে কর্মরত একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনা মহামারিতেও টিউবের বোরিংকাজ হয়েছে। কাজ শুরুর পর এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এখনো যেভাবে টানেলের নির্মাণকাজ চলছে, তাতে কাজ আরো দ্রুত হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে (২০২২ সাল) কাজ শেষ করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
প্রকল্পটির উপপরিচালক প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে।
দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হতে বছরখানেক লাগতে পারে। উভয় টানেলে দুই লেন করে সড়ক হবে। এ ছাড়া সংযোগ সড়কের কাজও চলমান। নদীতে পানির লেভেল থেকে ৪৩ মিটার গভীরে এ টানেল হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনপিং (বাংলাদেশ সফরকালে) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এ টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে এর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানি (সিসিসিসি) চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনের মাধ্যমে এ কাজ করছে।
মন্তব্য