মালিকের পরিবর্তে সংবাদপত্রকর্মীকেই আয়কর দিতে হবে এবং তাঁরা বছরে শুধু একটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) পাবেন—নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশে সংযুক্ত এই বিধান কেন অবৈধ ও আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদসচিব, তথ্যসচিব ও শ্রমসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামানের করা রিট আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ড. কাজী আকতার হামিদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
সংবাদপত্রে ওয়েজ বোর্ড হিসেবে পরিচিত নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ হিসেবে পাস করা গেজেটে বলা হয়েছে, ‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণের বেতনের উপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীগণ কর্তৃক তাঁদের নিজ নিজ আয় হতে প্রদান করতে হবে।’
‘সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীগণ প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশবিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’
বাসসের কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামান এই দুটি বিধান চ্যালেঞ্জ করে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মচারীদের বেতনের ওপর আয়কর পরিশোধ করতে হবে। সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আয়কর পরিশোধ করতে দায়বদ্ধ ও বাধ্য। কিন্তু নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডে আয়কর চাপানো হয়েছে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের ওপর।
এ ছাড়া নবম মজুরি বোর্ডের সপ্তম অধ্যায়ে দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ একটি মূল বেতনের সমান অনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশটিও নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে গ্রহণ করা হয়েছে, যা স্ববিরোধী বা সাংঘর্ষিক।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ড ওই বছরের ৪ নভেম্বর তখনকার তথ্যমন্ত্রীর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তী সময়ে সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে আহ্বায়ক করে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এর ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
মন্তব্য