<p>ঢাকা শহরের নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায়নি। তবে জমি কেনার সম্ভাব্য প্রাক্কলনে অতিরিক্ত মূল্য দেখানো হয়েছে। যদিও এই সম্ভাব্য প্রাক্কলন গত মার্চ মাসেই প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি সংশোধনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু এই সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণে জেলা প্রশাসনসহ চার দপ্তরের ভূমিকা থাকলেও ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে প্রকল্প পরিচালককে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।</p> <p>জানা যায়, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঢাকা শহরের নিকটবর্তী স্থানে ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। নানা অভিযোগ উঠলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।</p> <p>তদন্ত কমিটির সদস্য এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে এখনো কোনো আর্থিক দুর্নীতি বা অর্থ আত্মসাৎ হয়নি। তাই আমরা সুপারিশ করেছি, ভবিষ্যতে যাতে প্রকল্প পরিচালক ভালোভাবে প্রাক্কলন যাচাই করেন।’</p> <p>তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ছয়টি প্রকল্পের মধ্যে শুধু গাছপালা ও অবকাঠামো (যদি থাকে) উল্লেখ করে প্রায় ১০১ কোটি টাকার ওপরে অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের একটি প্রকল্পে নালা শ্রেণি, ভিটি শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে।</p> <p>তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে না দেখার জন্য। মাউশি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দিল আফরোজ বিনতে অছিরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ডিসি অফিস থেকে প্রাপ্ত সম্ভাব্য মূল্য প্রাক্কলনের প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রতিস্বাক্ষর করার জন্য। ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার তোফায়েল আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে ঢাকার ছয়টি প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরির জন্য। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. ইকবাল হোসেন, সার্ভেয়ার মো. বশিরউল্লাহ ও কানুনগো আতিকুর রহমান মজুমদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে নালা শ্রেণির জমিকে বাণিজ্যিক শ্রেণি দেখিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত সম্ভাব্য প্রাক্কলন তৈরির জন্য।</p> <p>শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর ২১ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) সংশোধন করে আরডিপিপি (রিভাইজড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) প্রস্তুত করতে অবশিষ্ট জমির জন্য প্রাক্কলন চাওয়া হয় ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে। দুই জেলার পাঠানো সম্ভাব্য ব্যয়ের প্রাক্কলন নিয়ে প্রস্তুত করা হয় আরডিপিপি।</p> <p>আরডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির গত ১০ মার্চের সভায় সংশোধনের কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ খাতে প্রয়োজন অনুসারে প্রকৃত মূল্য ও নির্মাণকাজের ব্যয় প্রাক্কলন হালনাগাদ করে আরডিপিপি তৈরির কথা বলা হয়। বর্তমানে এসব কাজ চলমান।</p> <p>প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। অথচ ৩০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে, যা কল্পনাপ্রসূত।’</p>