প্রায় প্রতিদিনই দালালের মাধ্যমে বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য দলে দলে রওনা হয় বসনিয়ায় থাকা বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থীরা। তারা একে বলে, ‘গেম মারা’। কখনো হেঁটে, কখনো বাসে চড়ে, কখনো ট্যাক্সিতে তাদেরকে দালালরা সীমান্তের আশপাশে নিয়ে নামিয়ে দেয়। এরপর তাদের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিতে হয়।
অলিউর রহমান ১৩ বারের মতো চেষ্টা করছেন সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার। বুশি নামের এক পাকিস্তানি দালালের মাধ্যমে বাসে চড়ে তিনি যাবেন ক্রোয়েশিয়া সীমান্তের পাশে কোনো এক জায়গায়। সেখান থেকে দুই দিন হেঁটে তারপর তাঁরা পৌঁছবেন সীমান্তে। অলিউর জানান, এরই মধ্যে তিনি দুইবার ক্রোয়েশিয়া পেরিয়ে স্লোভেনিয়ায় পৌঁছলেও সেখানে ধরা পড়ে আবার ফেরত এসেছেন। ফেরত আসার পথে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে।
কিন্তু তার পরও কেন আবার একই পথে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে অলিউর বলেন, ‘এই গেমের জন্য অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে, প্রায় চার লাখ টাকা। এ জন্য যেতেই হবে।’
সবার অবস্থা অবশ্য এক রকম না। অনেকেই এখন ফেরত যাওয়ার ইচ্ছাও মনে মনে পোষণ করছে।
কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেরই খরচ হয়েছে বড় অঙ্কের টাকা।
বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসাতে আটকে পড়াদের বেশির ভাগই বসনিয়ায় এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইরান, তুরস্ক, গ্রিস, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া হয়ে।
অনেকেরই এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে ১৫-২০ লাখ টাকা। কেউ কেউ ভিটেমাটি বিক্রি বা বন্ধক রেখেও টাকা এনেছে। ফলে দেশে ফিরে এখন চাকরি বা ব্যবসা করে সে ঋণ শোধ করা সম্ভব না বলেও মনে করছে তারা।
সিলেটের ছাতক থেকে আসা সাইফুর রহমান জানান, তাঁর বন্ধুরা এর আগে বেশ কয়েকবার ‘গেমে গিয়ে’ ব্যর্থ হয়েছেন এবং বাজেভাবে আহত হয়ে এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপের নামটাই আসলে আমাদের পাগল করেছে, তাই এই পর্যন্ত আসা।’
এখন বাংলাদেশে ফেরত যাবেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাইফুর বলেন, ‘আমার এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেউ যদি আমাকে বলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আমার জায়গায় আসবে, আমি পাঁচ লাখ টাকা লস দিয়ে হলেও দেশে চলে যাব।’
যারা বাংলাদেশ বা অন্য যেকোনো জায়গায় মোটামুটি পরিবার চালানোর মতো অর্থ উপার্জন করতে পারছেন, তাঁরা যেন ভুলেও এই পথে ইউরোপ যাওয়ার জন্য না আসেন, সে অনুরোধও জানিয়েছেন সাইফুর। সূত্র : ডয়চে ভেলে।
মন্তব্য