ভারতের কারাগারে বন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ও জেএমবির জঙ্গি মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আটকে গেছে। ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তাঁদের দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট স্থবিরতায় সেই উদ্যোগ গতি হারিয়েছে।
জঙ্গি সংগঠন জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ মিজান ২০০৫ সালে সারা দেশে বোমা হামলার অন্যতম কুশীলব। চট্টগ্রাম অঞ্চলের হামলাগুলোতে সরাসরি নেতৃত্ব দেন এই জঙ্গি। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তাঁকে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। তাঁকেসহ তিন জঙ্গিকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের আদালতে নেওয়ার পথে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সহযোগী জঙ্গিরা। পালিয়ে যাওয়া অন্য দুই জঙ্গি ছিলেন—মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ। তাঁদের মধ্যে রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওই দিনই টাঙ্গাইলে জনতার হাতে ধরা পড়েন। পরে গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। আর ভারতে পালিয়ে যান বোমা মিজান।
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে মিজানকে গ্রেপ্তার করে দেশটির জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। এ ছাড়া সংস্থাটি কেরালা থেকে ওই বছরের ৩ আগস্ট আব্দুল করিম ওরফে ছোটা ও মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে শাহিন ওরফে তুহিনকে আটক করে।
অন্যদিকে সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম মোল্লা মাসুদও ভারতের কারাগারে বন্দি। তাঁকেও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নয়াদিল্লি ডেস্ক থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বার্তা পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুর থানায় ফরেনার্স অ্যাক্টে দায়ের হওয়া মামলায় মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বোমা মিজান ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর খবর পেয়েই সে দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়। বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে এই চুক্তির আওতায় নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে আনা হয়।
মিজানকে ফেরত আনার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মিজানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে ফিরিয়ে আনার আবেদন পৌঁছায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ায় এসব বিষয়ে আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশে বন্দি অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তবে কিছুদিন ধরে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখছেন। আটকে আছে প্রক্রিয়া, তা পুনরায় সচলের চেষ্টা চলছে।
মোল্লা মাসুদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি, তাতে মোল্লা মাসুদ ভারতের কারাগারে বন্দি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিদেশে পলাতক কোনো সন্ত্রাসী দেশে ফেরে কি না সে বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর রাখি।’
মন্তব্য