<p>‘আমারে আল্লায় কী করল গো, আমার সব শেষ হইল গো, আমি এহন কী করমু গো।’ আহাজারি করছিলেন নাজমা খাতুন (৩২)। তাঁর স্বামী মেহেদী হাসান ওরফে হাসেম আলী (৪০) স্ট্রোক করে গত সোমবার রাতে মারা গেছেন। তাঁর জানাজায় শরিক হতে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারোমারীর আন্ধারুপাড়ায় আসার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও ভালুকার স্বজনরা। শিশু, নারীসহ নিহত হয়েছে আটজন। মাত্র এক রাতের ব্যবধানে এতগুলো মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ। হাসেম আলীর পরিবারসহ পুরো এলাকাবাসী শোকে কাতর হয়ে পড়েছে।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে মৃত হাসেম আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্ত্রী নাজমা খাতুন বিলাপ করে চলেছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছে প্রতিবেশীরা। একমাত্র মেয়ে হালিমা খাতুন (১৩) নির্বাক হয়ে আছে। তখনো হাসেম আলীর লাশ রাখার স্থানে শামিয়ানা টানানো ছিল।</p> <p>প্রতিবেশী বেলাল হোসেন ও গিয়াস উদ্দিন জানান, হাসেম আলীর পরিবারে তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও মা রইলেন। বাবা আব্দুস সামাদ গত বছর মারা গেছেন। ছোট ভাই আত্মহত্যা করেছেন কয়েক বছর আগে। চার বোনের বিয়ে হয়েছে।</p> <p>তাঁরা জানালেন, স্বজনদের দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার খবর হাসেম আলীর মাকে জানানো হয়নি। একদিকে পুত্র শোক, অন্যদিকে এতজন স্বজন হারানোর ব্যথা তিনি সইতে পারবেন না।</p> <p>হাসেম আলীর চাচা মো. সুরুজ্জামান বলেন, ‘এ শোক আমরা কেমনে সইব! এক লাশের দাফন-কাফনে আসার পথে আটজন লাশ হলো। এইডা সওয়ন যায় না!’</p> <p>এলাকাবাসী জানায়, হাসেম আলী গতকাল রাতে বাজারে গিয়ে হঠাৎ করে স্ট্রোক করে পড়ে যান। তাঁর নাক-মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাঁকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল সকালে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আত্মীয়রা আসার পথে ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে আটজন নিহত হয়। এই খবরে হতবাক হয়ে পড়ে হাসেমের পরিবার ও এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে হাসেম আলীকে দাফন করা হয়।</p>