প্রতিবছরই রোজার আগে সিটি করপোরেশন থেকে গরুর মাংসের দাম বেঁধে দেওয়া হয়। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। গতবারও ঈদের দু-তিন দিন আগে ৫২৫ টাকা কেজির মাংস রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকায়। এবার তো মাংস ব্যবসায়ীদের ‘পোয়া বারো’।
বিজ্ঞাপন
একে দাম বেঁধে দেওয়া হয়নি, এর ওপর বাজারে নেই তদারকি। ফলে বেশির ভাগ বাজারে কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। দেশি ছোট গরু, এমন দাবি করে কোথাও কোথাও ৬৫০ টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগের দু-এক দিনে দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ভোক্তারা।
যদিও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী হাটে গরুর আমদানি বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে মাংসের চাহিদা। সে অনুযায়ী দাম বাড়ার যৌক্তিক কারণ নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকায় মাস দুয়েক আগেও গরুর মাংসের কেজি ছিল ৫২৫ টাকা। পরে তা বেড়ে ৫৫০ টাকায় ওঠে। দাম নতুন করে বেড়েছে করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি শুরুর হওয়ার আগে। সেটি আর কমার নাম নেই।
প্রতিবছর রজমান মাসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিত সিটি করপোরেশন। এবার তা করা হয়নি। মাঝে একবার বৈঠক হলেও শেষ পর্যন্ত দামের বিষয়ে ফায়সালা হয়নি।
বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও চড়া। গরুর মাংসের দামে লাগাম টেনে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার সুযোগ ছিল। মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল ইসলাম বলছেন, দেশে ৪৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম রোজায় মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এবারও বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হাটের চাঁদাবাজি ও অতিরিক্ত ফি নেওয়া বন্ধের দাবি তাঁরা তুললে করপোরেশন তার সমাধান দিতে পারেনি।
সব মিলিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের গরুর মাংস কেনার উপায় নেই। অথচ চার-পাঁচ বছর আগেও নাগালের মধ্যেই ছিল গরুর মাংস। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশে গরুর মাংসের কেজিপ্রতি গড় দাম ২৭৫ টাকা ছিল। তখন ব্রয়লার মুরগির গড় দাম ছিল ১৩৭ টাকা কেজি। ২০১৮ সালে গরুর মাংসের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ৪৩০ টাকা হয়। আর মুরগির দাম কমে হয় কেজিতে ১৩১ টাকা। এখন বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকার ওপরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মুগদা, গোপীবাগ ও মালিবাগসহ কয়েকটি বাজারে গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। জানতে চাইলে মুগদা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী সালাম এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি আজ পর্যন্ত আগের কেনা গরু বিক্রি করেছি। তাই আমার দোকানে মাংসের দাম এখনো ৫৮০ টাকা। তবে অনেক জায়গায় ৬০০ বা তার বেশিও বিক্রি করার খবর পেয়েছি। ’ এবার মাংসের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলে জানান তিনি। সালাম বলেন, ‘করোনার কারণে গাবতলীতে আগে গরু কিছুটা কম আসত। এখন অনেক গরু আসছে। অনেকে ঈদে বিক্রি করবে বলে গরু পালে। তা ছাড়া মাংস বিক্রিও কমেছে আগের তুলনায়। ’
এই ব্যবসায়ীর মতে, এই বাজারে ঈদের আগে তিন দিন গড়ে ১০ থেকে ১৫টা গরু বিক্রি হতো। কিন্তু এবার বাজার পরিস্থিতি বলছে তিন থেকে চারটার বেশি হবে না।
ঈদ সামনে রেখে কয়েক দিন ধরে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দামও। ১২০-৩০ টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-৬০ টাকা কেজিতে। তবে ব্রয়লার মুরগির কেজি মাঝে ১৩০ টাকা পার হলেও চলতি বছরের অধিকাংশ সময় তা ১২০ টাকার মধ্যেই ছিল।
ঈদের আঁচ লেগেছে সবজির বাজারেও। হঠাৎ বেড়েছে শসা-লেবুর মতো নিত্যপণ্যের দাম। গতকাল রাজধানীর একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের মধ্যে লেবুর দাম সবচেয়ে বেশি। বড় আকারের প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। অথচ তিন-চার দিন আগে এই মানের লেবু পাওয়া গেছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হালিতে। মাঝারি আকারের লেবু কিনতে গেলেও ক্রেতাকে হালিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ছোট আকারের পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
ঈদের বেচাকেনায় সরগরম বাজার
ঈদের বেচাকেনায় সরগরম হয়ে উঠছে রাজধানীর বাজারগুলো। ঈদের উপহার কিংবা সহায়তা দেওয়ার জন্য মানুষ বাজারে যাচ্ছে সেমাই, চিনি, ডাল, তেল কিনতে। নিজেদের জন্য কিনছে অনেকে। ফলে বাজারে ভিড় বাড়ছে। কমছে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। কেউ এ ব্যাপারে কিছু বলছে না। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বাজারগুলো।
গতকাল মানিকনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি ভ্যান। গায়ে গায়ে লাগানো এসব ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজি। স্থায়ী দোকানগুলোতে মানুষ কেনাকাটা করছে সামাজিক দূরত্ব না মেনে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। একই চিত্র গোপীবাগ, মালিবাগ, বাসাবো, খিলগাঁওসহ অন্য কাঁচাবাজারগুলোয়।
গোপীবাগ বাজারে আসা আরাফাত নামের এক ক্রেতা বললেন, ‘এখন তো সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমি দূরত্ব মানলেও অন্যজন মানছে না। ’