জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সাল মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে (এসডিজি) অর্জনে বেসরকারি খাতের উদ্যোগের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এক গবেষণা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অভ্যন্তীরণ সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার করার কথাও বলা হয়েছে। গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের উদ্যোগে এটি বেসরকারি পর্যায়ের প্রথম এসডিজিবিষয়ক প্রতিবেদন।
ওই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, এসডিজি অর্জনে পাঁচটি ‘পি’তে জোর দিতে হবে।
এই পাঁচ ‘পি’ হচ্ছে পিপল (জনগণ), প্ল্যান (পরিকল্পনা), পারসেপশন (মনোভাব), পিস (শান্তি) ও পার্টনারশিপ (অংশীদারিত্ব)।
তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। যার পরিমাণ বছরে ৮ থেকে ১৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এসডিজি অর্জনে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে হবে।
এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রচুর অর্থের। এ অর্থের বড় অংশ বিদেশি বিনিয়োগ থেকে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ হতে পারে সরকারের সঙ্গে, বেসরকারি খাতের সঙ্গে অথবা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের সঙ্গে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পরিবর্তনশীল বিশ্বে সমতা ও বৈষম্যহীন উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ১৭টি অভীষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অভীষ্ট সামনে রেখে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ১০টি খাতকে। এর মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এসব খাতে অংশগ্রহণকারীদের সফলতার সঙ্গে নিজেদের উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার কথা বলা হয়েছে।
বেসরকারি খাত, সরকারি খাত, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ পাঁচটি খাত থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অর্থ সংগ্রহ করার সুযোগ আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করে পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। আর্থ-সামাজিক পর্যায়ে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবায়নে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করার সুযোগ আছে বাংলাদেশের। উন্নয়নমুখী সুশাসন নিশ্চিত করতে এসডিজিকে ‘অন্যতম নিয়ামক’ মনে করা হয়েছে।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্রিন ডেল্টার সুবিধাভোগীদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গ্রিন ডেল্টার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানাহ চৌধুরী। সিএসআর সেন্টারের চেয়ারম্যান ফারুক সোবহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদস্য মোশাররফ হোসেন, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো।
দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমন্বিত অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এসডিজি অর্জনের মাধ্যমে সরকার সোনার বাংলা গড়ার কাজ করছে। সরকারের পাশাপাশি অবশ্যই বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।’ বেসরকারি খাত, সরকারি খাত, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ পাঁচটি খাত থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অর্থ সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় এসডিজিকে অন্তর্ভুক্ত করে পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
মন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক পর্যায়ে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবায়নে আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। উন্নয়নমুখী সুশাসন নিশ্চিতে এসডিজিকে ‘অন্যতম নিয়ামক’ মনে করে সরকার।
ফারজানাহ চৌধুরী বলেন, এসডিজি মূলনীতির আলোকে পরিবেশ ঝুঁকি এড়িয়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে উদ্ভাবনী সেবা প্রদানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারদের ভিত্তিতে কাজ করছে গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স। আগামী দশকে এসডিজির ১৬৯টি লক্ষ্য ১৭টি অভীষ্ট অর্জনের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আন্ত প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা বাড়ানো গেলে জাতীয় পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা সহজ হবে বলেও জানান তিনি।
২০০০ সালে শুরু হওয়া ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এমডিজি অর্জনের সময় শেষ হয় ২০১৫ সালে। এরপর জাতিসংঘ ঘোষণা করে ১৫ বছর মেয়াদি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০১৬ থেকে ২০৩০ মেয়াদে এসডিজির ১৭টি অভীষ্ট পূরণ করতে হবে।