শনিবার । ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯। ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২৬। ৯ রবিউস সানি ১৪৪১
জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন উবারের মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী আকলিমা আক্তার জুঁই (২৩)। রাজধানীর বিজয় সরণিতে গত শনিবার দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে তিনি চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।
ইডেন কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন জুঁই। লেখাপড়ার পাশাপাশি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিজেকে সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য। ভর্তিও হয়েছিলেন উপস্থাপনার একটি কোচিং সেন্টারে। আর্থিকভাবে পরিবারকে যাতে চাপ দিতে না হয় সে জন্য নিজেও একটি কোচিংয়ে পড়াতেন। এমনটাই জানালেন জুঁইয়ের খালাতো বোন ঋতু আক্তার।
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে ফার্মগেট যাওয়ার পথে বিজয় সরণিতে উবারের মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সুন্দরপুরে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট আবুল কালামের তিন কন্যাসন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। পরিবারের সঙ্গে কাফরুলের ৫০৩ নম্বর পূর্ব কাজীপাড়ার বাসায় থাকতেন।
উবার চালক সুমনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, জুঁইকে নিয়ে মিরপুর কাজীপাড়া থেকে ফার্মগেট যাওয়ার পথে বিজয় সরণি মোড়ে আসতেই জুঁইয়ের ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোনের রিংটোন বাজতে থাকে। তখন ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করতে গিয়ে পেছন থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান জুঁই। এরপর তিনি দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
দুর্ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে মেয়ের পাশে সারাক্ষণ বসে থেকেছেন মা রোকেয়া বেগম সুমি। সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফেরার পর থেকে বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। কেবলই বলছেন, ‘মেয়েটার সঙ্গে শেষ কথা হলো না। আমার মেয়ে খুব আদরের ছিল।’
জুঁইয়ের বাবা আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এইটা কী হইলো, কিছু বুঝলাম না। মাইয়াটা শুক্রবারেও কথা কইলো। আর দুই দিন (আইসিইউয়ে ছিলেন) কথা না কইয়া একবারে গেলোগা। আল্লাহ, আমার মাইয়াডারে বেহেশত নসিব করুন।’
মেজো বোন তানজিনা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাই-বোনের মধ্যে ছোট হওয়ায় পরিবারের সবার আদরের ছিল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে ওকে পাই আমরা, কিন্তু কোনো কথা হয়নি।’
আইসিইউয়ে চিকিৎসা দেওয়া ডা. আব্বাস বলেন, ‘আমরা খুব সিরিয়াসলি চিকিৎসা দিয়েছি। যখন নিয়ে আসা হয় তখন ওর হার্টবিট পুরো বন্ধ ছিল। পরে কিছুটা রিকভার করলেও আর উন্নতি হচ্ছিল না।’
মন্তব্য