রাজধানীসহ সর্বত্র অভিযান চলছে। উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৬০ হাজার টন আছে পথে। তার পরও পেঁয়াজে অতিমুনাফার লোভ কমছে না ব্যবসায়ীদের। এখনো দাম শীর্ষবিন্দু থেকে নামছে না। ভোক্তার রোষানলে পড়ার ভয়ে পাড়া-মহল্লার দোকানে কম থাকলেও রাজধানীর বাজারে বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ দেখা যাচ্ছে। ভোক্তারা চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন এমন নৈরাজ্য দেখে। তাঁরা অভিযোগ করছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর শান্তিবাগ, শহীদবাগ ও মগবাজার ঘুরে, দোকানদার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর শান্তিবাগ মহল্লার রেজাউল স্টোরের কামরুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানুষের রোষানলে পড়ার ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছি না। ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি ধরে পেঁয়াজ কিনে পোষায় না। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ী আর দোকানি সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই ভোক্তার ক্ষোভ আর অসন্তোষ থেকে বাঁচতেই পেঁয়াজ আনা বন্ধ করে দিয়েছেন দোকানের মহাজন।’
সিদ্ধেশ্বরীর গুড ফুড স্টোরের কর্মী সুমন মিয়া জানান, পেঁয়াজের পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে। এত টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনে এনে তা বিক্রি করা যাবে না। তাই বিক্রি বন্ধ।
গতকাল কথা হয় খিলগাঁওয়ের আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনি একটি কোচিং সেন্টারে কাজ করেন। শহীদবাগ মসজিদ গলি থেকে ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ কিনেছেন ৬২ টাকা দিয়ে। এতে খুব ছোট আকারে ১০টি পেঁয়াজ পেয়েছেন। এত দামে কেন পেঁয়াজ কিনছেন জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আমরা দুবেলা ভাত খাই আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে। এতে পেঁয়াজের কোনো বিকল্প নেই। তাই নিরুপায় হয়ে বেশি দাম দিয়ে হলেও পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে।’
টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন : রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাক সেল থেকে লম্বা লাইন দিয়ে পেঁয়াজ কিনছে মানুষ। পশ্চিম রামপুরার ডিআইটি রোডের একটি টিসিবির ট্রাকের সামনে দুই শতাধিক মানুষের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। কথা হয় রাহেলা নামের এক নারীর সঙ্গে। তিনি বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। দীর্ঘ চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক প্রত্যাশার পর এক কেজি পেঁয়াজ পেয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে থাকায় কাজ চলে যাবে এমন আতঙ্কের কথাও জানান। বলেন, এত সময় লাগবে জানলে পেঁয়াজ কিনতাম না। এ রকম বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা গেছে রাজধানীর অসংখ্য মানুষকে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি গতকাল বিশেষ ব্যবস্থায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে। টিসিবির তথ্য কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাইকারি বাজার : গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা পেঁয়াজ অপেক্ষাকৃত কম হলেও দেশি পেঁয়াজের কোনো অভাব নেই। পাইকার ও আড়তদাররা জানান, পাবনা ও মানিকগঞ্জ থেকে এসেছে এসব পেঁয়াজ। এ ছাড়া মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৯৫০ টাকা পাল্লা, কেজি পড়েছে ১৯০ টাকা। দেশি ১২৫০ টাকা পাল্লা, কেজিতে ২৪০ টাকা।
কথা হয় একই বাজারের সবজি বিক্রেতা বাদশা মিয়ার সঙ্গে। তিনি ২৪০ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। তিনি দুঃখ করে জানান, পেঁয়াজের বাজার এমনিতেই বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখেন কোথাও পেঁয়াজের অভাব নেই।
পেঁয়াজের বাজার এমন চড়ার কথা উল্লেখ করে বাদশা মিয়া অভিযোগ করেন, সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের আঁতাত আছে। ভারতের পেঁয়াজ না পাওয়ার অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছে। মজুদদারদের ধরা গেলে এর প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে। বাজারে প্রতিদিন সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দার লোকজন বাজার দেখতে আসছে। ওনাদের আচরণ এমন যে, দেখেও দেখছেন না।
কারওয়ান বাজারের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, আমদানিকারকরাই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন। সরকারের পেঁয়াজের অভিযানে তাঁরা খেপে গিয়ে বাজারে নৈরাজ্য করছেন।
বিমানে পেঁয়াজ আসছে মঙ্গলবার : বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়াতে মিসর থেকে কার্গো বিমানযোগে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছবে মঙ্গলবার। এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে, এটি তার প্রথম চালান। পর্যায়ক্রমে অন্য আমদানিকারকের পেঁয়াজ কার্গো বিমানযোগে দেশে আসবে।
চালের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে : চালের বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে মিনিকেট ও মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তার দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের মোটা চালের দাম।
মন্তব্য