জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার বিতর্কিত বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে পার্টির ভেতর থেকে উঠেছে তাঁর পদত্যাগের দাবি। রাঙ্গার ওই বক্তব্যের দায় নিচ্ছে না জাতীয় পার্টি। পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই বিতর্কিত বক্তব্য জাতীয় পার্টি ধারণ করে না।
তৃতীয় কারো ইন্ধনে আ. লীগ জাপায় বিরোধ চান রাঙ্গা!
লায়েকুজ্জামান

গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে, জাতীয় পার্টির ভাষায় গণতন্ত্র দিবসের আলোচনাসভায় মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘নূর হোসেন একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। নূর হোসেন ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল।’ এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার এবং বাকশাল করে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে ভিডিওতে ধারণ করা ওই বক্তব্যে দেখা যায়, মসিউর রহমান রাঙ্গা ওই দিন লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লিখিত বক্তব্য দেওয়ার সময় উত্তেজনাপ্রসূত কিছু বলার সুযোগ থাকে না। রাঙ্গা যা বলেছেন, তা আগেই পরিকল্পনা করে লিখে এনেছেন।’ ওই নেতা আরো মনে করেন, তৃতীয় কারো ইন্ধনে রাঙ্গা দীর্ঘদিনের মিত্র আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার বিরোধ বাধিয়ে রাজনীতির জল ঘোলা করতে চাচ্ছেন।
রাঙ্গার আদি বাড়ি লালমনিরহাটে হলেও নির্বাচন করেন রংপুর থেকে। জাপার মহাসচিব হওয়ার পর দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। জাপা মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিলেন পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে। প্রথম দফায় চেকের মাধ্যমে রাঙ্গাকে দেওয়া হয় দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করার চুক্তি হলেও এক মাস পর বাকি টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন রাঙ্গা। একপর্যায়ে বিষয়টি প্রকাশিত হলে মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর বরাতে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। সে সময় ক্ষুব্ধ রাঙ্গা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীকে একতরফা অব্যাহতি দেন। জি এম কাদের পরে মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর ওই অব্যাহতি প্রত্যাহার করে নেন।
জাপার একটি সূত্র জানায় ২০০৬ সালে বাতিল হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির ঐক্য হওয়ার নেপথ্য কারিগর ছিলেন মসিউর রহমান রাঙ্গা। পরে এরশাদ ২০০৮ সালের নির্বাচনে হঠাৎ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোট গঠন করেন। অভিযোগ আছে, রংপুরে জাপার একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন রাঙ্গা। ওই গ্রুপের বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির থেকে এনে জাপায় পুর্নবাসন করেন রাঙ্গা। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শাফিয়ার আহমেদ শাফিকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। তিনি একসময় ছাত্রশিবির রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।
একাত্তরে রাঙ্গার পরিবারের অবস্থান ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে। জীবিকার তাগিদে নানা ধরনের পেশা পাল্টে শেষে একটি বাস কেনার মাধ্যমে বাস মালিক সমিতির নেতা হন রাঙ্গা। রংপুরের শ্রমিক নেতা আকরাম হত্যার পর শহরে আলোচিত হয়ে ওঠেন রাঙ্গা। ২০০০ সালে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু এরশাদের জাপা ছেড়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপিতে যোগ দিলে এরশাদের জাপায় যোগ দেন রাঙ্গা। পরে এমপি নির্বাচিত হন রংপুরের গঙ্গাচড়া থেকে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্য নিয়ে আমরা বিব্রত। আমরা অস্বস্তিতে আছি। আমি ভাবতেও পারছি না শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার, বঙ্গবন্ধুকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী আর নূর হোসেনকে নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস সে কোথায় পেল? জাতীয় পার্টি তার এই বক্তব্যের দায় নেবে না। আমি মনে করি, এমন একজন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তির পার্টির মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নূর হোসেনের পরিবারের প্রতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সমব্যথী ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে জাতীয় পার্টি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন-মৃত্যুদিন পালন করবে। ঠিক সেই সময় রাঙ্গা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে তৃতীয় কোনো পক্ষের স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় পার্টিকে বিতর্কিত করতে চাইলেন? আমরা মনে করি রাঙ্গার দ্রুত পদত্যাগ করা উচিত।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নূর হোসেনের মায়ের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি। বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আর পার্টির ফোরামে পদত্যাগের দাবি কেউ করেনি।’
সম্পর্কিত খবর

বর্ষায়ও হাতিরঝিলের পানি দূষণ


জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ দেশব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ রবিবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘পিপল হু ফট ফর আস’ ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : স্টোরি অব মুশতাক আহমদ’সহ জুলাইয়ের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঢাকায় মিরপুর-১০ ও বছিলায় শহীদদের স্মরণে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে। গতকাল শনিবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, আজ ২০ জুলাই ‘গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দিবস’ স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’। কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন ‘একটি শহিদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৬ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

আদিলুর রহমান খান
ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে মানুষকে ঢাকাকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোর ভালো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে মানুষ কাজের জন্য ঢাকা এলেও, কাজ সেরে ফিরে যেতে পারছে না।
গতকাল শনিবার বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকায় নিম্নবিত্তের সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন’ শীর্ষক এক বিশেষ ডিজাইন-গবেষণা উপস্থাপনা ও আলোচনায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্লট ও ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা বাতিল করেছে সরকার। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে রাজউক থেকে লটারির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হাতে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আদিলুর রহমান খান।
উপদেষ্টা বলেন, নতুন করে যেন বাংলাদেশে কখনোই আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।

শিক্ষাঙ্গন
