<p>জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে প্রতিবছর অসহনীয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূল, সমভূমি ও চরাঞ্চলের জনপদ। যথাযথভাবে বাঁধ তৈরি ও সংস্কারের অভাবে পানির চাপ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে প্লাবিত হচ্ছে এসব এলাকা। সুপেয় পানির অভাব ও তীব্র লবণাক্ততার কারণে স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে স্থানীয়রা। অভিযোজনকারীদের জন্য নেই ভালো কোনো ব্যবস্থা। দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান। বাঁধ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ, তাদের সঙ্গে নেই স্থানীয় সরকার ও জনগণের সম্পৃক্ততা। গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামতে স্থানীয় সরকার ও জনগণের সম্পৃক্ততা থাকলে এসব সমস্যা কমে আসবে।</p> <p>গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) আয়োজিত ‘স্থানীয় অভিযোজন অগ্রাধিকার ও বাঁধ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক পরামর্শসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।</p> <p>সিএসআরএলের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক প্রদীপ কুমার রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীপক কান্তি পাল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আইনুন নিশাত, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের টিম লিডার জেরি ফক্স। সিএসআরএলের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তার সঞ্চালনায় পরামর্শসভায় সমস্যা তুলে ধরেন কয়রা, শ্যামনগর ও গাইবান্ধা সদর উপজেলা থেকে আসা স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা।</p> <p>স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান, তাঁদের চাহিদা নিরূপণ না করেই জলবায়ু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার ফলে স্থানীয় অভিযোজনকারীদের চাহিদা উপেক্ষিত থাকে। কয়রা ও শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ, লবণাক্ততা দূরীকরণ, সুপেয় পানির সংকট এবং গাইবান্ধা সদরে নদীভাঙন ও কর্মসংস্থানের সংকট থাকলেও সেখানে এসব বিষয়ে কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি। ওই সব অঞ্চলে কিছু জলবায়ু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও স্থানীয় জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সেসব সম্পর্কে কিছুই জানে না।</p> <p>এ ছাড়া আরো কিছু সমস্যা তাঁরা তুলে ধরেন। যেমন—বেড়িবাঁধ মজবুত ও উঁচু না হওয়ায় তাড়াতাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, বাঁধ তৈরি পর আশপাশে বৃক্ষরোপণ করার উদ্যোগ নেই, পুকুর, খাল ও নদী ভূমিদস্যুরা দখল করে আছে, স্লুইস গেটে রয়েছে অব্যবস্থাপনা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ফান্ডগুলো স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে আসে না, জলবায়ু উদ্বাস্তু যারা তাদের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেই; নেই কোনো কর্মসংস্থানও।</p> <p>হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কাজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় সরকারের মতামত ও চাহিদানুযায়ী সেসব নির্মাণ করা হয়নি। কেন হয়নি জবাবদিহি করার সময় এসেছে। অভিযোজনের প্রকল্প হলে রক্ষণাবেক্ষণের জায়গা ঠিক করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশে চমৎকার উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু তার সুফল সাধারণ জনগণ কতটা পাচ্ছে তা দেখতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, নীতি হচ্ছে, পরিকল্পনা হচ্ছে।</p>