<p>একসময় খালটি ২০-৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল। এখন কোথাও পাঁচ থেকে ছয় ফুট হয়েছে। আশপাশে থাকা অনেক বাড়ির মলমূত্র অপসারণের পাইপ লাগানো আছে খালটিতে। স্থানীয়রা বলে, এইডা খাল না, স্যুয়ারেজ লাইন। এ মরণদশা হয়েছিল রাজধানীর দোলাইরপাড় এলাকার কুতুবখালী খালের। তবে বর্তমানে কিছুদিন পরপরই খালটি পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু পরিষ্কার করার পরই লোকজন আবার ময়লা ফেলে এটিকে ভাগাড়ে পরিণত করে।</p> <p>এলাকাবাসী জানাল, খালে মলমূত্র আসায় পানি গন্ধ হয়ে থাকে। আগে অবস্থা অনেক খারাপ ছিল, কিন্তু এখন কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করার কারণে কিছুটা কমেছে।</p> <p>গত ২১ জানুয়ারি দোলাইরপাড় এলাকার কুতুবখালী খাল দখলমুক্ত ও পরিষ্কারকাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। উদ্বোধনের পর তিনি নিজেই হ্যান্ডমাইক নিয়ে কিছুদূর পর্যন্ত মাইকিং করে এলাকাবাসীকে খালে আবর্জনা না ফেলার অনুরোধ জানান। তিনি দোকানে দোকানে গিয়ে বলেন, কেউ যেন খাল পরিষ্কারের পর নতুন করে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে। এ সময় উপস্থিত লোকজন তাঁকে ময়লা না ফেলার বিষয়ে কথা দেয়।  কিন্তু সেই কথা রাখছে না লোকজন।</p> <p>বিষয়টি স্বীকার করেন ৬১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জুম্মন মিয়া। তিনি বলেন, ‘খালটি যাতে পরিষ্কার থাকে সে জন্য আমরা খালপারের মানুষকে সচেতন করছি।’</p> <p>এলাকাবাসী জানায়, একসময় এই খাল দোলাইরপাড় থেকে শুরু হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী, কাজলা, শনির আখড়া হয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গিয়ে অন্য একটি খালের সঙ্গে মিশেছিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হওয়ার পর কুতুবখালী এলাকায় রাস্তার নিচে বিশাল পাইপ দিয়ে খালের সংযোগ রক্ষা করা হচ্ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে কাজলা এলাকায় খাল ভরাট হয়ে যায়। পরে কুতুবখালী খালের পানি যাওয়ার জন্য তিন-চার ফুটের ড্রেন করা হয় শনির আখড়া পর্যন্ত। সেখানে আরেকটি খালে গিয়ে মিশেছে এই ড্রেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া জানান, যে ড্রেন দিয়ে কুতুবখালী খালের পানি যাচ্ছে সেটিও কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করার কারণে পানি আটকাচ্ছে না।</p> <p>খালপারের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, গত জানুয়ারিতে কুতুবখালী খাল পরিষ্কার করার পর প্রতি মাসেই সিটি করপোরেশনের এক্সকাভেটর দিয়ে আবর্জনা পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে খালে আগে যেমন ময়লা আটকে ভরাট হয়ে গিয়ে আশপাশের এলাকায় পানি উঠত, এবার সেটা হচ্ছে না। এবারের বর্ষায় এখন পর্যন্ত সে সমস্যা দেখা দেয়নি।</p> <p>খালপারে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দোলাইরপাড় থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী দুই থেকে আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও কোথাও ময়লা-আবর্জনা পানির ওপর ভাসছে। আর পুরো খালের পানি নোংরা ও দুর্গন্ধময়। দেখা যায়, খালটির দুই কিনারা ফিলার দিয়ে আটকে দেওয়ার কারণে এখন আর ভাঙন হয় না। অবশ্য দু-এক জায়গায় একদিক ফিলার দিয়ে আটকানো হয়নি। আশপাশের বাড়ির মলমূত্র অপসারণের জন্য খালে পাইপ বসানো হয়েছে।</p> <p>এলাকাবাসী জানায়, আবর্জনা ফেলার কারণে খালটি প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল। আগে বৃষ্টি হলেই পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা দেখা দিত। কুতুবখালী এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, বছর দেড়েক আগেও দুই দিকে পাইলিং করে বাঁধ দেওয়া ছিল না। তখন বর্ষাকালে ভাঙন দেখা দিত। পাইলিং করে দুই পাশে বাঁধ দেওয়ার কারণে সেই সমস্যা থেকে বাঁচা গেছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া বলেন, ‘যাদের বাসার মলমূত্র খালে ফেলা হচ্ছে তাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করব। তাদেরকে বলব নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ট্যাংক বানিয়ে নেওয়ার জন্য।’</p>