প্রায় এক মাস ধরে অনুষ্ঠিত হলো কিশোরগঞ্জ করিগরি ও কৃষি কলেজের পাঁচটি সেমিস্টারের সমাপনী বোর্ড পরীক্ষা। কিন্তু এক দিনের জন্যও এসব পরীক্ষা তদারকি বা নজরদারি করতে যাননি প্রশাসনের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এ সুযোগে নিজেদের মতো ফ্রি স্টাইলে পরীক্ষা নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষার্থীদের নকল করে পরীক্ষা দিতে সহযোগিতা করেছে কলেজের লোকজন। সরেজমিনে গিয়েও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মোসাদ্দেক আলী ভূঞা কিশোরগঞ্জ কারিগরি ও কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ ও সভাপতি। কলেজটিতে আট পর্বের ডিপ্লোমা ইন অ্যাগ্রিকালচার শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫০। গত ৭ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত কলেজের দ্বিতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের বিভিন্ন বিষয়ে বোর্ড সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কিভাবে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে কি না, তার কোনো নজরদারি ছিল না। প্রশাসনের কেউ একবারের জন্যও পরীক্ষা দেখতে কেন্দ্রে যাননি। ফলে পরীক্ষার্থীরা ফ্রি স্টাইলে দেখাদেখি, নকল করে সব পরীক্ষা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও প্রতিটি পরীক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি করার নিয়ম রয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষের মালিকানাধীন শহরের ৪১২ নীলগঞ্জ রোডের একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলার কয়েকটি কক্ষে কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে কলেজের পরীক্ষাগুলোর কেন্দ্র ছিল আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে। গত ২৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির শেষ প্রান্তে একটি কক্ষে চতুর্থ সেমিস্টারের ৪১ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে কোনো পরীক্ষার্থী সামনের বেঞ্চগুলোতে বসেননি। প্রায় সবাই গাদাগাদি করে বসেছেন একেবারে পেছনের বেঞ্চগুলোতে। আর একজনের খাতা আরেকজন দেখাদেখি করে লিখছেন। কয়েকজনকে প্রকাশ্যে নকল করে উত্তর লিখতে দেখা যায়।
এ সময় পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন কলেজটির শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ও অফিস সহকারী আলী আকবর। নকলের বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা কিছুটা হাঁকডাক করে তৎপরতা দেখান। শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ অবধি কেউ পরীক্ষা দেখতে আসেনি। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আমরাই নিয়ে আসি।’ কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তাঁদের কলেজে কোনো স্থায়ী শিক্ষক নেই। তাঁরা ক্লাসপিছু ২৫০ টাকা করে ভাতা পান। আলী আকবর জানালেন, এই কলেজে এ ধরনের শিক্ষক আছেন পাঁচজন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজটিতে খুব একটা ক্লাস হয় না। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষা দেয়।
মন্তব্য