মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার আজিমপুর মহল্লার নুরুল হকের সিংগাইর মৌজার ৫ নম্বর সিটে রয়েছে পারিবারিক দেড় একর জমি। তাঁর জমি ও মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রে কোনো সমস্যা নেই। তার পরও জমি রেকর্ডভুক্ত করতে গেলে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয়ের সার্ভেয়র জানে আলম। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জমি রেকর্ডভুক্ত করতে নানা টালবাহানা শুরু করেন জরিপকর্মীরা।
সিংগাইরে অসহায় জমির মালিকরা
টাকা ছাড়া নড়েন না ভূমি জরিপ কর্মীরা
মোবারক হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)

সদর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের কৃষক আওলাদ হোসেন বলেন, ১৪ শতাংশ জমির জরিপকাজের জন্য চার হাজার টাকা দাবি করেন ৯ নম্বর সিটের সার্ভেয়র হারুন অর রশিদ। পরে দুই হাজার টাকা দিলে জমি রেকর্ডভুক্ত করে আমাকে মাঠ পরচা দেন জরিপকর্মীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু তাঁরা দুজনই নন, ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে উপজেলার চরসিংগাইর, রিফায়েতপুর, দক্ষিণ জামশা, বায়রা ও বিনোদপুর ছোট খণ্ড মৌজায় জমির মালিকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে খতিয়ানপ্রতি এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন উপজেলা সেটলমেন্ট অফিস ও দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয়ের জরিপকর্মীরা। জমির পরিমাণ, ছোটখাটো ভুলত্রুটি সংশোধন এবং দাগ খতিয়ান ঠিক রাখতে জরিপকর্মীদের দাবি করা টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে জমির মালিকরা। টাকা দেওয়ার পর ক্ষতি হতে পারে সে শঙ্কায় মুখ খোলার সাহস পায় না কেউই। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত এপ্রিল থেকে উপজেলার রিফায়েতপুর, দক্ষিণ জামশা, বায়রা ও বিনোদপুর ছোট খণ্ড মৌজা এবং জুন থেকে উপজেলার চরসিংগাইর মৌজায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের কাজ শুরু হয়। চরসিংগাইর মৌজায় দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক (ক্যাম্প) কার্যালয় ও বাকি চার মৌজায় উপজেলা সেটলমেন্ট অফিসের জরিপকর্মীরা ভূমি জরিপ করছেন।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সার্ভেয়র শফিকুর রহমান ও জানে আলম বলেন, জমি রেকর্ডভুক্ত করতে কোনো টাকা-পয়সা নেওয়া হয় না। কাজ শেষে কেউ যদি খুশি হয়ে কিছু দেয়, তাহলে সেটা নিই। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না—এমন অভিযোগ সত্য নয়।
গত এক সপ্তাহে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কমপক্ষে ৫০ জন জমির মালিকের। তারা জানায়, জমি রেকর্ডভুক্ত করতে তাদের সবারই কমবেশি টাকা খরচ হয়েছে। কারো টাকা ছাড়া কাজ হয়নি। তাদের মধ্যে আজিমপুর গ্রামের নুরুল হকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার, আওলাদ হোসেনের কাছ থেকে দুই হাজার, ফজল মিয়ার কাছ থেকে সাত হাজার, হযরত আলীর কাছ থেকে তিন হাজার, আজিমপুর গ্রামের কাজী আলী হোসেন ও তাঁর ভাতিজা আব্দুস সালামের কাছ থেকে আট হাজার, গোলাড়া গ্রামের রুহুল আমীনের কাছ থেকে দুই হাজার ৫০০, শাহীনুর রহমানের কাছ থেকে এক হাজার, মোক্তার খানের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছেন জরিপকর্মীরা।
হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জমির মালিক জানায়, খতিয়ানপ্রতি এক হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন জরিপকর্মীরা। কারো কাছ থেকে আরো বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলার পাঁচটি মৌজায় ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে জমির মালিকদের কাছ থেকে আনুমানিক তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জরিপদলের লোকজন।
দিয়ারা অপারেশন নরসিংদী উপ-আঞ্চলিক ক্যাম্পের রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ‘জরিপকর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার ঢালাও অভিযোগ ঠিক নয়। স্থানীয় দালালচক্র আমাদের কথা বলে টাকা নিতে পারে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা সহকারী সেটলমেন্ট অফিসার আব্দুল কুদ্দুস জানান, ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজের জন্য টাকা-পয়সা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। জরিপকাজের জন্য কারো বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা রহমত উল্লাহ বলেন, ‘ভূমি জরিপে কিছু অনিয়মের কথা লোকমুখে শুনেছি। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্পর্কিত খবর

বর্ষায়ও হাতিরঝিলের পানি দূষণ


জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ দেশব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ রবিবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘পিপল হু ফট ফর আস’ ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : স্টোরি অব মুশতাক আহমদ’সহ জুলাইয়ের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঢাকায় মিরপুর-১০ ও বছিলায় শহীদদের স্মরণে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে। গতকাল শনিবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, আজ ২০ জুলাই ‘গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দিবস’ স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’। কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন ‘একটি শহিদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৬ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

আদিলুর রহমান খান
ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে মানুষকে ঢাকাকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোর ভালো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে মানুষ কাজের জন্য ঢাকা এলেও, কাজ সেরে ফিরে যেতে পারছে না।
গতকাল শনিবার বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকায় নিম্নবিত্তের সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন’ শীর্ষক এক বিশেষ ডিজাইন-গবেষণা উপস্থাপনা ও আলোচনায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্লট ও ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা বাতিল করেছে সরকার। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে রাজউক থেকে লটারির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হাতে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আদিলুর রহমান খান।
উপদেষ্টা বলেন, নতুন করে যেন বাংলাদেশে কখনোই আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।

শিক্ষাঙ্গন
