<p>দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য আরেক বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইলস (পিসিবি) নামের বিশেষ রাসায়নিক তেল। এই তেল মূলত ডাইইলেকট্রিক এবং ক্লোনেট ফ্লুইড হিসেবে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে। ফলে এটি ট্রান্সফরমার অয়েল হিসেবে বহুল পরিচিত, যা পানি, মাটি, ফসল, মাছ-মাংস হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে অক্ষয় চর্বিজাতীয় বিপজ্জনক উপাদানে রূপ নেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। দেশে এক শ্রেণির অসাধু খাদ্যপণ্য ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার মাধ্যমে রেস্টুরেন্টে খাদ্য তৈরিতে এই তেল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে কাজ শুরু করেছে একটি বিশেষ প্রকল্প।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা জানান, এই তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হওয়ায় বিশ্বের বহু দেশে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশও এই তেল ব্যবহার বন্ধে জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার ফোরামে অঙ্গীকার অনুসারে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এই তেল ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। ২০০৭ সালের এক হিসাব অনুসারে, দেশে কমপক্ষে ৫০০ মেট্রিক টন ট্রান্সফরমার অয়েল বর্জ্য হিসেবে থেকে যায়, যা বর্তমানে আরো বেড়েছে। আর দেশের সবগুলো সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভিন্ন মাত্রার লাখ লাখ ট্রান্সফরমার ব্যবহার হচ্ছে পুরো দেশে। এর বিপদ থেকে রক্ষায় সরকারের কঠোর ব্যবস্থার পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। </p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিক ও মনুষ্য তৈরিজনিত নানা ধরনের দূষণে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছি। নানা ধরনের সার, কীটনাশকের পাশাপাশি আর্সেনিক আমাদের জন্য বিপদ হিসেবে চেপে আছে। এখন আরেক বিপদ হয়ে এসেছে নিষিদ্ধ ট্রান্সফরমার অয়েল বা পিসিবি। এই বিপদ থেকে রক্ষায় ইউনিডোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর মাধ্যমে দেশে কী পরিমাণ পিসিবি আছে তা খুঁজে বের করে ধ্বংসের উদ্যোগ নেব। পাশাপাশি সবগুলো বিদ্যুৎ কম্পানিকে আমরা এই তেল ব্যবহারে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম তা কতটা মানা হচ্ছে তাও দেখা হবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, অবৈধভাবে এই তেলের ব্যবহার হলে তা বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে।’</p> <p>তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে সব রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরই সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনা করা উচিত। কারণ এসব রাসায়নিক দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে বিপদ ডেকে আনছে। দেশের মানুষের নিত্যনতুন রোগের অন্যতম কারণ হিসেবে এসব বর্জ্য মারাত্মক ভূমিকা রাখছে।’</p> <p>দেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় প্রায় ৩০ লাখ ট্রান্সফরমার রয়েছে, যেখানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন লিটার অয়েল ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তাদের আওতায় সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৪০০ বড় ধরনের ট্রান্সফরমার রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আওতায়ও একইভাবে বিভিন্ন সংখ্যায় এ ট্রান্সফরমার রয়েছে, যা মেরামতের সময় এর ভেতর থেকে তেল বের করে নতুন তেল প্রতিস্থাপন করা হয়। পুরনো তেল বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এর ফাঁক গলেই বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে এসব তেল বাইরে চলে যায়।</p> <p>এদিকে দেশকে এই বিষাক্ত পিসিবি থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ বাস্তবায়নে করণীয় ঠিক করতে গতকাল বুধবার পরিবেশ অধিদপ্তরে এক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহম্মেদ। ইউনিডের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অফিসার (স্টকহোম কনভেনশন) আদিবোয়েগা আজানি, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দারসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।</p>