<p>কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জোরপূর্বক এক বিয়ের আসরে মা-বাবার বেধড়ক পিটুনি খেয়েও কবুল বলেনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। অবশেষে বিয়ের আসর ত্যাগ করে বরসহ স্বজনরা। পরে বাড়িতে এনেও তৃষাকে মারধর করেন মা-বাবা। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার আশায় এভাবে নির্যাতনের মুখে বিয়ে ভেঙে দিতে সক্ষম হয় তৃষা পারভীন নামের এই সাহসী শিক্ষার্থী।</p> <p>কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের এলঙ্গী এলাকায় গত রবিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এত দিন ঘরবন্দি থাকার খবর পেয়ে কুমারখালী মহিলা পরিষদের নেত্রীরা গতকাল শনিবার মেয়েটিকে উদ্ধার করেন এবং নিজেদের জিম্মায় নেন।</p> <p>তৃষা এলঙ্গী গ্রামের দিনমজুর আব্দুস সালাম ও গৃহিণী নাগরী খাতুনের মেয়ে। তৃষা কুমারখালী শহরের জেএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এবার সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও তাকে স্কুলে যেতে না দিয়ে গোপনে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার মা-বাবা।</p> <p>মহিলা পরিষদ সূত্র জানায়, কয়েক মাস ধরে বিয়েতে তৃষাকে রাজি করাতে পারছিলেন তার মা-বাবা। এ অবস্থায় তার অমতে গত ১৬ জুন তৃষাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় নন্দলালপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে তার চাচার বাড়িতে। সেখানে ওই দিন রাতে তৃষাকে শাড়ি-চুড়ি পরিয়ে বধূ সাজিয়ে নিজের ফুফাতো ভাই রাজমিস্ত্রির এক জোগালির সঙ্গে তৃষার বিয়ের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বিয়ের আসরে তৃষা কবুল বলতে রাজি হয়নি। বারবার চেষ্টার পর বিয়ের আসরেই মা-বাবা তৃষাকে বেধড়ক মারধর করেন। এতেও সে কবুল বলেনি। একপর্যায়ে বরসহ আত্মীয়স্বজন চলে যায়।</p> <p>জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তৃষার এক নানি গোপনে কুমারখালী মহিলা পরিষদ নেত্রী শামীমা পারভীন রোজীকে জানান। পরে গতকাল দুপুরে মহিলা পরিষদ কুমারখালীর সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা বেগম নীলা, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমা পারভীন রোজী ও আলেফা খাতুন তৃষাদের বাড়িতে যান। এ সময় তৃষার মা নাগরী খাতুন নারী নেত্রীদের বলেন, ‘আর কত পড়াশোনা করবে। মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে। রেলের পাশে বাস করি, ঠিকমতো সংসার চলে না পড়াশোনার খরচ চালানোর উপায় নেই। তাই বিয়ে দিয়ে দিতে চাই।’ এ সময় নারী নেত্রীরা বাল্যবিয়ের নানা খারাপ দিক তুলে ধরলেও তৃষার মা পড়াশোনা করাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তৃষার পড়াশোনার খরচসহ অন্যান্য খরচ দিতে চান নীলা। তবু তৃষাকে পড়াশোনা করাতে আগ্রহী নয় বলে জানান মা নাগরী। একপর্যায়ে রওশন আরা বেগম নীলা তৃষাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করাতে চাইলে এতে রাজি হয় পরিবার।</p> <p> </p>