<p>সুনামগঞ্জের হাওরে চলছে ‘চৈত মাইয়া নিদান (চৈত্র মাসের আকাল)’। হাওর থেকে সারা বছরের খোরাকি সংগ্রহকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত কৃষকের ভাণ্ডার এই সময়ে এসে শূন্য হয়ে যায়। তাই পুরো চৈত্র মাসই দুর্ভোগে পড়ে কৃষকদের একটা অংশ। তখন হাইব্রিড ও অফশী জাতের ধানের আগ্রাসনে টিকে থাকা দেশি বোরো ধান (আদি ধান) দিয়ে হাওরের কৃষক নিদান দূর করে। গত বৃহস্পতিবার থেকে অবহেলায় রোপণ করা দেশি বোরো ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। কৃষি বিভাগের মতে, সুনামগঞ্জ সদর, জগন্নাথপুর ও দিরাইয়ের কিছু এলাকায় দেশি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে অন্যান্য ধানও কাটা শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছে।</p> <p>সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে দুই লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র চার হাজার দুই হেক্টর জমিতে কৃষক দেশি বোরো চাষ করেছে। এবার ৩৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং এক লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৩ হেক্টর জমিতে অফশী (অধিক ফলনশীল) ধান চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছে, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হাওরের গভীরে পরিত্যক্ত ও অবহেলিত জমিতে দেশি বোরো ধান চাষ করা হয়। হাওরের জমির পুরনো পানিতে কোনোমতে চারা লাগিয়েই চলে আসা হয়। পরে নিড়ানি বা সারও দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আগে চাষ করায় ফলনও আগে চলে আসে। সুস্বাদু এ বোরো ধান কেটেই হাওরের প্রথম ফসলের স্বাদ নেয় কৃষকরা। লালচে ও কালচে রঙের দেশি বোরো ধানের শীষে ধারালো হুঙা (হুলের মতো) থাকে। স্থানীয় বাজারে এ ধানের দামও বেশি। অন্য ধানের মন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা হলেও এ ধানের দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। তবে অফশী ও হাইব্রিডের চেয়ে এই ধানের ফলন অনেক কম। হাওরের কিছু কৃষক এখনো শখ করে দেশি ধান লাগিয়ে থাকে। তবে এ বছর ধানের শীষ বেরোনোর সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে দেশি ধানের। এরপরও যেসব এলাকার জমিতে পানি ছিল, সেসব এলাকায় রোপণ করা দেশি বোরো ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষক। তবে মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সেচব্যবস্থা না থাকায় তাহিরপুরে আবাদ করা এক হাজার ৫০০ হেক্টর দেশি বোরো ধানের মধ্যে অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। যা আছে, তা কেটেও অর্ধেক ফলন পাওয়া যাবে না।</p> <p>জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরপারের গ্রাম বুরাখালীর কৃষক সিদ্দিক মিয়া বলেন, দেশি ধানের আবাদ প্রতিবছরই কমছে। পুরনো কৃষক যারা, তাদের কেউ কেউ পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিছু জমিতে এ ধানের চাষ করে। কিন্তু চৈত্র মাসে এ ধানই কৃষকের নিদান দূর করতে ভূমিকা রাখে।</p> <p>সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, দুই মাস ধরে প্রতিটি হাওরেই ঘুরেছি। গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরে গিয়ে দেখি, দেশি আদি জাতের বোরো ধান কাটছে কয়েকজন কৃষক।</p> <p><strong>ফসল</strong> <strong>ওঠার</strong> <strong>আগ</strong> <strong>পর্যন্ত</strong> <strong>প্রকল্পে</strong> <strong>পাহারাদার</strong> <strong>রাখার</strong> <strong>নির্দেশ</strong></p> <p>এদিকে জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হাওরের ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সুরক্ষায় পাহারাদার নিয়োগ করতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতিদের (পিআইসি) প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন জগন্নাথপুরের ইউএনও ও হাওরের ফসল রক্ষা পর্যবেক্ষণ উপজেলা কমিটির সভাপতি মাহফুজুল আলম মাসুম।</p>