<p>‘নির্বাচন কই দেখলেন, নির্বাচন তো দেখতাছি টেলিভিশনে’—নির্বাচন নিয়ে এই মন্তব্য করলেন পুরান ঢাকার আগামসি লেনের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-৭ আসনের বংশাল, চকবাজার, নিমতলী, বড় কাটরা, আগামসিহ লেন ঘুরে ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এলাকাটিতে নির্বাচন নিয়ে এখনো উদ্দীপনা টের পাওয়া যায়নি।</p> <p>নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুুযায়ী পোস্টার সরানোর কথা থাকলেও গতকাল এ এলাকাগুলোতে বিভিন্ন প্রার্থীর পোস্টার দেয়ালে সাঁটানো থাকতে দেখা গেছে।</p> <p>ঢাকা-৭ আসনটি ঢাকা মহানগরীর বংশাল, চকবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও ধানমণ্ডি থানার অংশ নিয়ে গঠিত। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে জয়লাভ করেন হাজি মো. সেলিম। এর আগেরবার এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এলাকাবাসী জানায়, এবার দুজনই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে তাদের মতে, হাজি সেলিম যে উন্নয়ন করেছেন তাতে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনও ভালো লোক বলে জানায় তারা।</p> <p>বিএনপির মনোনয়ন কে পাচ্ছেন জানতে চাইলে এলাকার লোকজন জানায়, একসময় এ এলাকার কমিশনার ছিলেন বিএনপি নেতা মো. মোহন। শোনা যাচ্ছে এবার তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর পরিবারের কয়েক সদস্যসহ আরো কয়েকজন মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে বিএনপির কে নির্বাচনে অংশ নেবেন তা নিয়ে এলাকায় তেমন একটা আলোচনা নেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নিয়েই আলোচনা চলছে। একজন জানান, বিএনপির লোকজন শান্তিতে নেই। গত সোমবার রাতেও পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজে অভিযান চালিয়েছে। এ এলাকার বেশির ভাগ বিএনপি নেতাই পলাতক। বিএনপির বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে কে? </p> <p>গতকাল বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আগামসি লেনের একটি চায়ের দোকানে কথা হচ্ছিল এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ। বাকিরা মধ্যবয়সী। নির্বাচনী আলোচনা ওঠাতেই বৃদ্ধ জামাল উদ্দিন বললেন, ‘নির্বাচন কই দেখলেন, নির্বাচন তো দেখতাছি টেলিভিশনে।’ তাঁর কথার সঙ্গে সুর মেলান অন্যরাও। তাঁরাও জানান, এবারের নির্বাচন অন্যান্যবারের চেয়ে অন্য রকম লাগছে। মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। গল্প করার সময়ই ওই লেন ধরে নৌকার একটি মিছিল আসে। ১৫-২০ জন লোক ‘নৌকা, নৌকা’ বলে মিছিল করতে করতে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। মিছিলে কোনো প্রার্থীর নাম উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। </p> <p>কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষের লোকই বেশি পাওয়া যায়। তাঁদের কেউ কেউ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের প্রশংসা করেন। আবার কেউ হাজি সেলিমের প্রশংসা করেন। নবাব কাটরা এলাকার দোকানি হযরত আলী কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়। গ্রামে তাঁর বাড়ি থাকলেও তিনি বহু বছর ধরে পুরান ঢাকায় বসবাস করেন। এ কারণে তিনি ভোটারও হয়েছেন এখানে।  প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই এলাকায় একসময় জলাবদ্ধতা হতো। হাজি সেলিম এমপি হওয়ার পর অনেক কাজ করেছেন। এখন জলাবদ্ধতা হয় না।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে আরো মনোনয়ন চেয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নাজমুল হক। আর বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি নাসিমা আক্তার কল্পনা, পিন্টুর ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মনি, পিন্টুর বোন ও মহানগর বিএনপির নেত্রী ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহযুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রফিক আহমেদ ডলার, মহানগর দক্ষিণের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু মোতালেব, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রাসেল, বংশাল বিএনপির সভাপতি মোহন, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও মহানগর দক্ষিণের নেতা আবুল মোনায়েম লিলি।</p>