<p>শীত জেঁকে বসেছে দেশজুড়ে। এর বাইরে নয় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের স্বর্ণদ্বীপও। রাত তো বটেই, দিনভর ঘন কুয়াশা দ্বীপ ও সংলগ্ন এলাকাজুড়ে। সেখানেই ঘাঁটি গেড়েছে শত্রুপক্ষ। বাংকার আর ট্যাংকসহযোগে ওরা হুমকি হয়ে উঠেছে পুরো দ্বীপবাসীর জন্য। এই শত্রুকে দমন করতে সেখানে অভিযান চালায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। পৌনে এক ঘণ্টার যুদ্ধে অবশেষে আসে চূড়ান্ত বিজয়।</p> <p>স্বর্ণদ্বীপে গতকাল রবিবার পরিচালিত সেনাবাহিনীর আক্রমণ অভিযানের মহড়ার চিত্র এটি। মহড়ার প্রেক্ষাপট—শত্রুপক্ষ দখল করে নিয়েছে বঙ্গোপসাগরের মাঝের স্বর্ণদ্বীপ। দ্বীপটিকে শত্রুমুক্ত করতে সরকারের নির্দেশে নৌ ও বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় সেনাবাহিনী সেখানে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করে। ট্যাংকের মাধ্যমে ভূমি থেকে ভূমিতে ভয়ংকর আক্রমণ চালানো হয়। গোলাগুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো দ্বীপ। চারদিকে জ্বলে ওঠে আগুন।</p> <p>বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরে চলছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশাল কর্মযজ্ঞ। ঝাউবন ঘেরা এই ভূখণ্ডের নাম আগে ছিল জাহাজ্জ্যার চর। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দ্বীপটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে স্বর্ণদীপ। ৭২ হাজার একরের স্বর্ণদ্বীপ এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে চলছে সেনাবাহিনীর নানামুখী প্রশিক্ষণ। সেসব প্রশিক্ষণে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ট্যাংক, এপিসি, মর্টার, অ্যান্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ও রকেট লঞ্চার, হেভি মেশিনগান ও সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি (এসপি আর্টিলারি)। এসব অস্ত্র নিয়ে মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ইনফেন্ট্রি, আর্মার্ড, আর্টিলারিসহ (ফিল্ড আর্টিলারি ও মিডিয়াম আর্টিলারি) বিভিন্ন কোর ও আর্মি এভিয়েশন। এতে উন্নত ও অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রশিক্ষণে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।</p> <p>গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় পরিচালিত সশস্ত্র বাহিনীর মহড়া অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শত্রুর সব অবস্থান। ধ্বংস হয়ে যায় শত্রুপক্ষের ট্যাংক ও বাংকার। হতাহত হয় শত্রুপক্ষের বহু সদস্য। মাত্র ৪৫ মিনিটের যুদ্ধে শত্রুর সব শক্তি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। অবশেষে যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় আসে। বিজয়ের এই খবর পৌঁছে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। তিনি ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে।</p> <p>শত্রু-শত্রুর এই খেলা সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া ‘অপারেশন ব্যাঘ্র থাবা’। গতকাল মহড়া পরিদর্শন করেন ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ-জামান ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. রাশেদ আমিন। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৌ-কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা। মহড়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কায়সার মালিক। পরিচালনা করে ১৭ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ পদাতিক ব্রিগেড।</p> <p>‘অপারেশন ব্যাঘ্রথাবা’ মহড়ায় পদাতিক সাঁজোয়া এবং গোলন্দাজ বাহিনী ছাড়াও সেনাবাহিনীর অন্য সব আর্মস/সার্ভিসেস অংশ নেয়। এই অনুশীলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন সংযোজিত অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া স্পেশাল ফোর্স হিসেবে এডহক প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের এক প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন প্যারাট্রুপার, আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপ, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এই আক্রমণ অনুশীলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।</p> <p>প্রত্যন্ত  ও দুর্গম দ্বীপটিতে আন্তর্জাতিক মানের এমন সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশে এ-ই প্রথম। জলদস্যুদের এক সময়ের নিরাপদ আস্তানা এই দ্বীপে গড়ে উঠছে নানা অবকাঠামো। একই সঙ্গে চলছে বনায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ।</p> <p>সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে ২০১৩ সালে চরটি বুঝিয়ে দেওয়ার পরপরই পাল্টাতে শুরু করে স্বর্ণদ্বীপের দৃশ্যপট। প্রথমেই জলদস্যুদের রাজত্বের অবসান ঘটে। নোয়াখালীর সুবর্ণ চর, চট্টগ্রামের দ্বীপ ও উপকূলীয় জনপদসহ আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে নিরাপদ। দীর্ঘদিনের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান স্থানীয় লোকজন। সম্ভাবনা জাগিয়ে তৈরি হয়েছে জীবিকা সন্ধানের নতুন নতুন পথ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে গড়ে তোলা হয়েছে সাইক্লোন শেল্টার। প্রাকৃতিক নানা ভাঙা-গড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে এসব তৈরি করছে সেনাবাহিনী।</p> <p>বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের জন্য স্বর্ণদ্বীপ সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা বলে জানিয়েছে সেনা কর্তৃপক্ষ। ৩৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে শুধু শীতকালে আনুমানিক পাঁচ মাস সীমিত এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়। বছরের অন্যান্য সময় দ্বীপের বেশিরভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত থাকে।</p> <p> </p>