মানসিক রোগের ভেতর সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর ও আলোচিত রোগের নাম 'কনভার্সন ডিজঅর্ডার'। এ রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ যেকোনো ধরনের সিম্পটম বা উপসর্গ নিয়ে হাজির হতে পারে। ব্যথা, প্যারালাইসিস, অন্ধ, খিঁচুনি, অবশ লাগা, বমি, দাঁত লেগে যাওয়া, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, সব কিছু ভুলে যাওয়া বা পাগলামী করা থেকে শুরু করে যেকোনো ধরনের উপসর্গই এ রোগের লক্ষণ হতে পারে। এ নিয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব।
হেল্থ কর্নার
বিভ্রান্তিকর মানসিক রোগ কনভার্সন ডিজঅর্ডার

কনভার্সন ডিজঅর্ডার : 'কনভার্সন' অর্থ পরিবর্তন বা রূপান্তর। এ রোগে মানসিক সমস্যা পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত হয়ে যেকোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক উপসর্গ তৈরি হতে পারে। শুনতে অদ্ভুত হলেও এটি সত্যি যে অসুখ-বিসুখ বিষয়ে যত ধরনের সমস্যা একজনের জানা আছে, সে সবের যেকোনোটিই আক্রান্ত ওই মানুষটির রোগের উপসর্গ হতে পারে। যেমন- মানুষ জানে রোগের কারণে খিঁচুনি হয়।
মোদ্দাকথা, মানসিক সমস্যাটি রূপান্তরিত হয়ে মানুষের জানা যেকোনো উপসর্গের মাধ্যামেই প্রকাশ পেতে পারে। উপসর্গটির পেছনে যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে, তবে সেটা 'কনভার্সন ডিজঅর্ডার' হবে না। অর্থাৎ এ রোগটির উৎস অবশ্যই মানসিক।
কারণ?
মোটা দাগে বলতে গেলে বলা যায়, একজন মানুষের যতটুকু চাপ নেওয়ার ক্ষমতা আছে, তার থেকে বেশি চাপের কারণেই এ রোগ হয়ে থাকে। তবে বিষয়টিকে একটু বর্ণনা করলে আরো স্পষ্ট হতে পারে। মানুষ যখন কোনো একটি বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায় বা দোদুল্যমান অবস্থার ভেতর আটকে যায়, অর্থাৎ
* যখন মনে হয় সমস্যা থেকে উতরে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই।
* কারো কাছে প্রকাশ করার মতো নয়।
* কিংবা প্রকাশ হয়ে গেলে আরো বেশি সমস্যা হবে।
* কোনোভাবেই সমাধানের কোনো রাস্তা নেই।
* দুটি কিংবা তিনটি সমস্যা যখন একসঙ্গে চলে আসে, তখন সমাধান খুঁজে পাওয়া কঠিন।
সব মিলিয়ে মনের ভেতর যখন প্রচণ্ড একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় এবং মনের ভেতর সমস্যাটি আটকে যায়, তখনই এমন রোগ হতে পারে। চেপে থাকা মানসিক সমস্যাটির বহিঃপ্রকাশই এ রোগ। মজার ব্যাপার হলো, রোগী নিজে সমস্যাটির ব্যাপারে জানতে পারে আবার নাও জানতে পারে বা নাও বুঝতে পারে।
এ রোগের জন্য ব্যক্তিত্বকেও দায়ী করা হয়। যারা নরম স্বভাবের মানুষ বা এনজাইটি যাদের বেশি হয়, তাদের এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
নামকরণ ও ব্যাখ্যা :
সিগমান্ড ফ্রয়েড এ রোগটির নামকরণ করেছেন কনভার্সন ডিজঅর্ডার। তিনি দেখেছেন, মানুষের মনের ভেতর চেপে থাকা মানসিক সমস্যাটি শারীরিক কোনো একটি লক্ষণ দিয়ে প্রকাশ হয়। কখনো অন্য কোনো মানসিক সমস্যা দিয়েও প্রকাশ হয়ে থাকে, তাই এর নামকরণ এমন হয়েছে। দেখা যায়, এমনতর প্রকাশের কারণে মানুষের ভেতরের যন্ত্রণাটুকু কমে আসে।
হিস্টেরিয়া বা হিস্টেরিক কনভার্সন রিঅ্যাকশন :
প্রচলিতভাবে এ রোগটি হিস্টেরিয়া বা হিস্টেরিক কনভার্সন রিঅ্যাকশন। সংক্ষেপে 'এইচসিআর' নামেই বেশি পরিচিত। 'হিসটেরা' একটি গ্রিক শব্দ। (‘hystera’=uterus), ইংরেজিতে যাকে বলে ইউটেরাস। বাংলা অর্থ জরায়ু। আগে ভাবা হতো, এ রোগটি শুধু মেয়েদেরই হয় এবং জরায়ুর এক ধরনের বিশেষ মুভমেন্টের কারণে এটি হয়। শরীরের বিশেষ ধরনের ফ্লুইড কম হওয়ার কারণে জরায়ুতে এমন মুভমেন্ট হয়। তাই এর নাম ছিল হিস্টেরিয়া বা হিস্টেরিক কনভার্সন রিঅ্যাকশন। কিন্তু পরে দেখা গেছে, এ রোগ শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও হয় এবং অবশ্যই রোগের কারণ জরায়ু নয় বরং (unresolved conflict) অসমাপ্ত মানসিক দ্বন্দ্ব।
কাদের হয়?
যেকোনো মানুষেরই এ রোগ হতে পারে। স্কুলে যাওয়া বাচ্চা থেকে বয়স্ক যেকোনো মানুষেরই এ রোগ হতে পারে। তবে সাধারণত ৪০ বছর বয়সের আগেই হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, যেহেতু যারা দুর্বল চিত্তের তাদেরই হয়। সুতরাং, যাদের হওয়ার কথা ৪০ বছর বয়সের আগেই তা প্রকাশ পায়। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই এ রোগ বেশি হয়।
কী কী হতে পারে বা কিভাবে প্রকাশ পেতে পারে?
শারীরিক যেকোনো ধরনের সমস্যা যেমন- মাথাব্যথা, শরীরের যেকোনো স্থানে ব্যথা, প্যারালাইসিস, অন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি, ঘন ঘন প্রশ্রাব বা পায়খানা, খিঁচুনি, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া, হাত-পা-মাথা বা শরীরের যেকোনো জায়গা কাঁপা, যৌন সমস্যাসহ যত ধরনের শারীরিক সমস্যা মনে করা যায়, তার সবই হতে পারে।
মানসিক সমস্যার ভেতর- টেনশন, মেজাজ খারাপ, হঠাৎ রেগে যাওয়া, কান্না করা, ঘুমের সমস্যা, ভুলে যাওয়া, কিছু মনে করতে না পারা, চিনতে না পারা, যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করাসহ অনেক কিছুই হতে পারে।
[আগামী পর্বে ছাপা হবে এর চিকিৎসাপদ্ধতি]
সম্পর্কিত খবর

বর্ষায়ও হাতিরঝিলের পানি দূষণ


জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ দেশব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে আজ রবিবার দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘পিপল হু ফট ফর আস’ ও ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট : স্টোরি অব মুশতাক আহমদ’সহ জুলাইয়ের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঢাকায় মিরপুর-১০ ও বছিলায় শহীদদের স্মরণে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে। গতকাল শনিবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, আজ ২০ জুলাই ‘গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ দিবস’ স্মরণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিউজিক ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’। কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন ‘একটি শহিদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৬ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

আদিলুর রহমান খান
ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘ঢাকা শহরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত সময়ে মানুষকে ঢাকাকেন্দ্রিক করে ফেলা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোর ভালো সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে মানুষ কাজের জন্য ঢাকা এলেও, কাজ সেরে ফিরে যেতে পারছে না।
গতকাল শনিবার বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকায় নিম্নবিত্তের সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন’ শীর্ষক এক বিশেষ ডিজাইন-গবেষণা উপস্থাপনা ও আলোচনায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্লট ও ফ্ল্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা বাতিল করেছে সরকার। স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে রাজউক থেকে লটারির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি হলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল হাতে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন আদিলুর রহমান খান।
উপদেষ্টা বলেন, নতুন করে যেন বাংলাদেশে কখনোই আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।

শিক্ষাঙ্গন
