রবিবার । ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯। ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৬। ১০ রবিউস সানি ১৪৪১
৫৫. সে [ইসমাঈল (আ.)] তার পরিবারবর্গকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত। আর সে ছিল তার রবের সন্তোষভাজন। (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫৫)
তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, হজরত ইসমাঈল (আ.) প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যনিষ্ঠ ছিলেন। আলোচ্য আয়াতে তাঁর আরেকটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ইসমাঈল (আ.) তাঁর পরিবার-পরিজনকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিতেন। এভাবেই একনিষ্ঠ ইবাদত ও দাওয়াতের মাধ্যমে তিনি তাঁর রবের পছন্দনীয় বান্দা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। হজরত ইসমাঈল (আ.)সহ সব নবীই নিজ পরিবারকে ইবাদত ও আমলমুখী করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। মহানবী (সা.) তাঁর নবুয়ত লাভের প্রথম দিকে নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দাওয়াত পৌঁছানোর ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছেন। এতে বোঝা যায়, পরিবারই মূলত শিক্ষা-দীক্ষার প্রধান কেন্দ্র। আর এ ক্ষেত্রে সন্তানের সোনালি ভবিষ্যৎ গড়তে মাতা-পিতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এক ব্যক্তি হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে নিজ সন্তানের ব্যাপারে নালিশ করল, ছেলে কথা শোনে না। হজরত ওমর (রা.) ছেলেটিকে ডেকে সাবধান করলেন এবং মা-বাবার হক আদায় না করায় তাকে শাসন করলেন। ছেলেটি বিনয়ের সঙ্গে বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! বাবার ওপর ছেলের কোনো হক নেই? তিনি বললেন, কেন থাকবে না? সে বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! ওই হক তাহলে কী? তিনি বললেন, বিয়ে করার সময় সন্তানদের জন্য ভালো মা নির্বাচন করা, বাচ্চার সুন্দর নাম রাখা এবং তাকে পবিত্র কোরআন শিক্ষা দেওয়া। (ইসলাম এবং তরবিয়তে আওলাদ, পৃষ্ঠা : ১৪২)
সন্তান পৃথিবীতে এসে সর্বপ্রথম যাঁর সান্নিধ্য লাভ করে, তিনি হচ্ছেন মা। সবচেয়ে বেশি যাঁর অনুসরণ বা অনুকরণ করে, তিনি হচ্ছেন মা। মায়ের প্রতিটি কথা ও কাজ, আচার-আচরণ শিশুর অবচেতন মনে রেখাপাত করে। তাই মায়ের কোল শিশুর প্রথম পাঠশালা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। তাই সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে বাবার চেয়ে মায়ের দায়িত্ব বেশি।
শিশুকাল থেকেই শিশুর মধ্যে ঈমানি দীক্ষা জাগ্রত করা উচিত। সদ্যোভূমিষ্ঠ শিশুর ডান কানে আজান আর বাঁ কানে ইকামত দেওয়ার মাধ্যমে সূচিত হয় ঈমানি দীক্ষা। তাই শিশু যখন বড় হতে থাকবে, তাকে ধীরে ধীরে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে বোঝাতে হবে। যখন সে আরেকটু বড় হবে, তখন নামাজ-রোজার মতো ইসলামের বুনিয়াদি আমলগুলোতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আরো বড় হলে ইসলামী শরিয়তের মৌলিক বিধি-বিধান শিক্ষা দিতে হবে।
মহানবী (সা.) বলেন, তোমাদের শিশুদের সর্বপ্রথম কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শেখাও। আর যখন মৃত্যুর মুখে উপনীত হয়, তখনো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তালকিন (ওই ব্যক্তির সামনে নিজে পাঠ) করো। কেননা যার প্রথম কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর শেষ কথাও হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, সে যদি হাজার বছরও বেঁচে থাকে, একটি গুনাহ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসিত হবে না। (শু’আবুল ঈমান, হাদিস : ৮৬৪৯)
আর শিশু সাত বছরে উপনীত হলে সন্তানকে নামাজ-রোজার কথা বলতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাত বছর পূর্ণ হলে তোমাদের সন্তানদের নামাজের আদেশ দাও। ১০ বছর বয়সে নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের জন্য পৃথক পৃথক বিছানার ব্যবস্থা করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ
মন্তব্য