ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

‘আদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় কিভাবে?’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘আদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় কিভাবে?’

সমাজের পরিচালিকা শক্তি হচ্ছে রাজনীতি। সমাজ যদি থাকে, সভ্যতা যদি থাকে, রাজনীতি অবশ্যই থাকবে। তবে প্রশ্ন হলো, কোন রাজনীতি কিভাবে থাকবে। সমাজবিকাশের একেকটি স্তরে এসে বিকাশের চাহিদা দেখা দেয় আবার সভ্যতাবিনাশেরও একটি প্রক্রিয়া চলতে থাকে।

যেমন, দাসব্যবস্থার অবসান হয়ে সামন্তবাদী রাজা-বাদশাহর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একপর্যায়ে গিয়ে সেটাও যখন সমাজ-সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন বিপ্লবের সূচনা হয়; বুর্জোয়া শ্রেণি তখন ক্ষমতায় আসে। বুর্জোয়ারা দুই হাজার বছর আগের সমাজকে ২০০ বছর অতিক্রম করে গিয়েছিল। কার্ল মার্ক্সের (জন্মগ্রহণের) ২০০ বছর পূর্তি হবে আগামী ৫ মে।
তিনি বলেছিলেন, পুঁজিবাদ একসময় সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে তার যৌবনে জরা এসেছে। এখন পুঁজিবাদ এমন জায়গায় গেছে—তার প্রগতিশীল ভূমিকা হারিয়ে ফেলেছে। এখন এটা টিকে থাকলে সভ্যতা বিনষ্ট হতে থাকবে।
ফলে এখন আরেকটা রাজনীতির প্রয়োজন। এভাবে রাজনীতির পরিবর্তন-বিবর্তন আছে।

মঙ্গলবার রাতে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ‘আজকের বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে ‘রাজনীতির ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় এ কথা বলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খালেদ মুহিউদ্দিন।

বাসদ নেতা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি না থাকলে আমরা স্বাধীন হলাম কিভাবে? আদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় কিভাবে? কোন সময় কোন আদর্শ কার্যকারিতাসম্পন্ন হবে, কোন সময় কোন আদর্শের চিন্তা অকার্যকর হয়ে যাবে—বিষয়টা বিবেচনার দাবি রাখে।

যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ৯ মাস যুদ্ধের সময় তাদের হাতে কোনো আওয়ামী লীগার মারা যায়নি। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গেও তারা কোলাকুলি করেনি। কিন্তু আজকে ছাত্রলীগের হাতে তাদের কর্মী খুন হচ্ছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিলেও রাজনীতির আদর্শহীনতার কারণে তারা আবার এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে।’

খালেকুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক আদর্শ কী? অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থা, আইন-কানুন, বিধি-বিধান, প্রথা, মূল্যবোধ ইত্যাদি কিভাবে সাজালে অগ্রগামী হওয়া যাবে তার নামই আদর্শ। কোনো রাজনৈতিক আদর্শের ওপর অন্ধভাবে আস্থা রাখার দরকার নেই। বিভিন্ন নীতি নিয়ে আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণের পর জনগণের কাছে যেটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখন আলোচনা-তর্ক নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির বিষয় নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, রাজনীতির কোনো ভবিষ্যৎ নেই বা রাজনীতি একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, এটা ঠিক নয়। রাজনীতিতে ইতিহাস নির্ধারিত যে দায়িত্ব-কর্তব্য আছে, তা মাথায় রেখেই রাজনীতিকরা রাজনীতিতে আসেন। সমাজের জন্য, মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করাই রাজনীতি—শুধু নিজের জন্য করা নয়। রাজনীতিতে সেবা হবে সম্পূর্ণই মানুষের জন্য। এই নীতিবাক্য নিয়ে মানুষ রাজনীতিতে আসে বলেই এটা শ্রেষ্ঠ নীতি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটা অন্ধকার যুগের মাঝ দিয়ে যাচ্ছি। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, সব কিছুই যেন ভেঙে পড়ছে। আলোর জগৎ ফিরিয়ে আনতে বহু রাজনীতিকের দরকার, তা কিন্তু নয়। যেমন রুশ বিপ্লব হয়েছিল বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে। এই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল সাতজনের। পরে একজন বিট্রে করেছিল। বাকি ছয়জন মাত্র ১০ দিনে রুশ বিপ্লব ঘটিয়েছিল। চীনেও এই অবস্থা হয়েছিল। মাও জেদং গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও করেছিলেন। মূল কথা হলো, জনগণের চাওয়াটাই আসল ব্যাপার।’

নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ পরিবর্তন চায়। এটা জনগণের প্রবণতা। এই পরিবর্তনের জন্য যখন তারা দেখে যে লড়াই করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে, তখন তারা সেটি করে। যেমন কোটা আন্দোলন গোটা ছাত্রসমাজকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে কৃষক আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ, ফরাজি, ওহাবিসহ বহু আন্দোলন হয়েছে। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা এখানে এসেছি। আমরা তাদের উত্তরাধিকারী। আন্দোলনের সূচনালগ্নে দু-একজন থাকেন সঠিক কথা বলার জন্য। আজকের রাজনীতিতেও পরিবর্তন আসবে। পরিবর্তনের পথে বাধা হলে জনগণ অচলায়তন ভাঙতে চায়। এই অচলায়তন হচ্ছে সমাজব্যবস্থা।’

বিএনপি নেতা বলেন, রাজনীতি এখন ব্যবসায়ী, আমলাদের হাতে চলে গেছে। রাজনীতিকরা তদবিরের জন্য ছুটছেন, যে কারণে সমাজে ব্যাপক দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুর্নীতির কারণে মানুষের মাঝে হতাশা ও নির্লিপ্ততা দেখা দিয়েছে। তবে এখনো কিছু ব্যক্তি আদর্শের জন্যই রাজনীতি করেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ