দৈনিক কালের কণ্ঠ'র ৯ অক্টোবর ২০১৫ (শুক্রবার) সংখ্যায় কবি রফিক আজাদের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারটি পড়ে আমি অত্যন্ত বেদনার্ত হয়েছি। কারণ কবি রফিক আজাদ 'ভাত দে হারামজাদা' কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে যা বলেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি নিজেই বলেছেন, 'কবিতাটি লেখা ভুল ছিল।
' তিনি নাকি না বুঝে এটা লিখেছিলেন। যে ঘটনার কারণে তিনি এটা লিখেছিলেন, সেটা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। কোনো একজন ফটোগ্রাফার বিখ্যাত হওয়ার জন্য এক মহিলাকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করেন এবং মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে বমি খাওয়ার অভিনয় করিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। এটা সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই বলেছেন। পত্রিকার এই মিথ্যা ছবি দেখে কবি রফিক আজাদের মনে হলো, 'কিসের স্বাধীনতা?' তারপর কোনো সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই লিখলেন 'ভাত দে হারামজাদা, তা না হলে মানচিত্র খাবো।'
এই কবিতার প্রসঙ্গ তুলে তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কত হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে! আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর বিরোধীরা এটাকে কাজে লাগিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। এমনকি ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পরও এই ঘটনা নিয়ে অনেক পানি ঘোলা করা হয়েছে। বিএনপি নেতা-নেত্রীরা সুযোগ পেলেই বাসন্তীর জাল পরা ছবি এবং কল্পিত দুর্ভিক্ষ নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে।
প্রতিটি নির্বাচনের সময় এবং বক্তৃতা দেওয়ার সময় এটা ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র ও প্রিয় বিষয়।
এই সাক্ষাৎকারের অন্যত্র কবি রফিক আজাদ স্বীকার করেছেন, 'বঙ্গবন্ধুর মতো লোক বলে আমিও বাঁচছি।' আমি বিএনপি নেতাকর্মীদের অনুরোধ করব, তাঁরা যেন সাক্ষাৎকারটি পড়েন। আর কবি রফিক আজাদকে অনুরোধ করব, তিনি যেন প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভবিষ্যতে কেউ যেন এ রকম মিথ্যা ঘটনা নিয়ে কোনো কবিতা, প্রবন্ধ রচনা অথবা টক শো না করেন।
এটা আমার সবিনয় অনুরোধ।
কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বিজ্ঞানী- এঁরা জাতির বিবেক। এঁদের অনুসরণ করে গড়ে উঠবে পরবর্তী প্রজন্ম। সেই বিবেক যদি মিথ্যাচার করে তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কী শিখবে? আমি আবার বলছি, সাক্ষাৎকারটি পড়ে অত্যন্ত বেদনার্ত হয়েছি। কারণ বঙ্গবন্ধু এত ত্যাগ স্বীকার করে, এত জেল-জুলুম ও সংগ্রাম করে আমাদের একটি মানচিত্র দিয়েছেন, আর রফিক আজাদ সাহেব একটা অসত্য কারণে সেই মানচিত্র খেয়ে ফেলতে চেয়ে অন্যায় করেছেন। তিনি হয়তো এত দিন পরে এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং স্বীকার করেছেন 'এটা আমার ভুল ছিল।' এই অনুশোচনা তাঁকে আমৃত্যু বহন করতে হবে। তার পরও কবি রফিক আজাদকে আমি ধন্যবাদ দেব, কারণ দেরিতে হলেও তিনি ভুলটি স্বীকার করার মতো সৎ সাহস দেখিয়েছেন।
ফরিদা শেখ
সদস্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।