কেউ সমুদ্রস্নান করছেন, কেউ ব্যস্ত জলকেলিতে। কারো আবার দূরের পাহাড় দেখে মুগ্ধতা শেষ হয় না। কেউ দুচোখ ভরে অপলক দেখে নিচ্ছেন দূরের ঝরনাধারা। ঈদের পর গত সোমবার থেকে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়ছেই।
বিনোদন
পর্যটনকেন্দ্রে ঈদছুটির মুখরতা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কক্সবাজারের দীর্ঘতম বেলাভূমিতে গতকাল বিকেলে ভিড় জমে লক্ষাধিক পর্যটকের।
জানা গেছে, উদ্ধারকারী সংস্থা সি-সেভ লাইফগার্ড দলের কর্মীরাও ঈদের আগে থেকেই সৈকতের তিনটি পয়েন্টে সকাল-সন্ধ্যা নিরাপত্তার কাজে ব্যস্ত থাকেন। এখন সাগর উত্তাল। তার ওপর সৈকতে বালুচরে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সমুদ্রে নামার আগে পর্যটকরা যাতে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ বা উদ্ধারকারীদের সহযোগিতা নেন, তার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে বৃষ্টিপাতে সিলেটে প্রকৃতি সেজেছে নতুন করে। গত সোমবার থেকে নদীকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক বাড়তে থাকে। গতকাল যেন তা পূর্ণতা পায়। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রথম দুই দিন কিছুটা হতাশায় কাটলেও গত সোমবার থেকে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক উপস্থিতি বেড়েছে। মঙ্গলবার হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং ৯০ শতাংশের বেশি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পর্যটকের গন্তব্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ও সিলেট মহানগরীর কাছের রাতারগুল। এর পরই আছে গোয়াইনঘাটের জাফলং। উত্মাছড়া, মায়াবী ঝরনা, চা-বাগান, লালাখানসহ সবখানেই গতকাল মঙ্গলবার পর্যটকে মুখর ছিল। রংপুর থেকে সপরিবারে বেড়াতে জাফলংয়ে যাওয়া জয়নাল মিয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এখানকার চারপাশের পরিবেশ খুব চমৎকার। জাফলংয়ের মায়াবী ঝরনা যেন মন কেড়ে নিয়েছে। খুব সুন্দর একটি জায়গা। খুব ভালো লাগল।’ ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সফাত উল্ল্যাহ বলেন, অন্যান্য বছর ঈদের দিন থেকেই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে। দুই দিন ধরে ভ্রমণপিপাসুদের আগমন বেড়েছে।
গতকাল ভোর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে ঝাউবন পর্যন্ত অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন। তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠায় অনেকে সমুদ্রে স্নানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেখানে উপস্থিত মো. কাওসার ও নাসরীন জাহান দম্পতি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আতিথেয়তায় কুয়াকাটা অদ্বিতীয়। খাগড়াছড়িতে আলুটিলা, জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, রহস্যময় গুহা, রিসাং ঝরনা এলাকা মুখর ছিল দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে। জেলার ভাইবোনছড়ায় মায়াবিনী লেক, জেলা সদরের হাতিমাথা পাহাড়, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, মাইচছড়ির দেবতা পুকুর এবং দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝরনায় ছুটে যান হাজারো পর্যটক। চট্টগ্রাম থেকে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া নজরুল ইসলাম বলেন, খাগড়াছড়িতে প্রথম বেড়াতে এসেই প্রেমে পড়ে গেলাম। পর্যটকদের ভিড়ে মুখর শহর রাঙামাটি। কাপ্তাই হ্রদজুড়ে গতকালও ছিল নৌবিহারের মনোরম দৃশ্য।
ঝুলন্ত সেতু দেখতে ভিড় ছিল। রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ভারতে ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকা এবং দেশের বাইরে অন্যান্য দেশে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় দেশের ভেতরে রাঙামাটিতেও ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের।
[প্রতিবেদনে তথ্য সহযোগিতা : বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার, নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি]
সম্পর্কিত খবর

বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ
ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

যেখানে ইয়ারলুং সভ্যতা প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, হিমালয়ের পাদদেশের সেই স্থানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পানিবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন। গতকাল শনিবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত ইয়ারলুং জাংবো নদীটি; দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল।
তিব্বত ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংবো নদীতে মেগাবাঁধের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছে চীন।
২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে তিব্বতে এই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গতি দ্বিগুণ করেছে বেইজিং।
তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিংচি এলাকায় এই বাঁধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।
ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হলে তা চীনের মধ্যাঞ্চলের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত রেকর্ড গড়া ‘থ্রি গর্জেস বাঁধকেও’ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাটি অঞ্চলের প্রবাহে কোটি কোটি মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
সিনহুয়া বলেছে, এই প্রকল্পে পাঁচটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত বলেছিল, তিব্বতের এই প্রকল্প নিয়ে চীনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত বলেছে, তারা তিব্বতে চীনা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উজানে কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা চীনকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনো ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না এবং চীন নদীর নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।
থ্রি গর্জেস প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চীন ১৪ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করেছিল। ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকার চেয়ে ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকা কম ঘনবসতিপূর্ণ। এর আগে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং জাংবো বাঁধ তিব্বতের মিডগ কাউন্টিতে নির্মাণ করা হবে, যে শহরের জনসংখ্যা ১৪ হাজার। এই বাঁধ নির্মাণে কতসংখ্যক মানুষ স্থানান্তরিত হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বাঁধটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না।
২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের এক আধার এবং বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। হিমবাহ গলে এবং পাহাড়ের ঝরনা বয়ে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহের মাধ্যমে ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে খাবার পানির জোগান দেয় ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ। সূত্র : এএফপি

মৃত্যু বাড়ছে ইজি বাইকে
- নিবন্ধন নেই, হচ্ছে নীতিমালা
১০ বছরে ১০ হাজার চালককে হত্যা : হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে প্রতিদিন প্রাণহানি বাড়ছেই। এর বড় কারণ ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকসহ তিন চাকার বাহন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তিন চাকার এই বাহন বাড়ছেই। এ ধরনের বাহনের নিবন্ধন নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।
ইজি বাইক ছিনতাই করার জন্য চালকদের পরিকল্পনা করে হত্যা করছে বিভিন্ন জেলার চক্র।
এ ব্যাপারে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে সারা দেশে দুষ্কৃতকারী ও ছিনতাইকারীরা কমপক্ষে ১০ হাজার চালককে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার চালক আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশাকে। এ ধরনের বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়কভেদে এই ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।
হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো বন্ধ করা যায়নি।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানি ও উৎপাদন হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানো হলেও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেড়েছে।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজি বাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কারিগরিভাবে সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত নয়। এর ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে এগুলোর চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই এসব ছোট যানবাহনের যাত্রী। কিন্তু সাশ্রয়ী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব বাহনে নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার এগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো নিয়মের বাইরে গিয়ে চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা হয়নি। ২০১১ সালে ইজি বাইক আমদানি বন্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত থাকে। ২০১৯ সালের জুনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক করে ‘দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’ করে বিআরটিএ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১২ সদস্যের ওই কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইকের মতো বাহনের কারণে। প্রতিবছর এই বাহনে প্রাণহানি বাড়ছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার তথ্য আবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

মেয়েদের আরেক জয়

গতকাল বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠে নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উমেহলা মারমার সঙ্গে উদযাপন পূজা দাসের (ডানে)। তাঁর জোড়া গোলে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফ ফুটবলে কাল শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি : মীর ফরিদ
।
চার জেলায় গৃহবধূ ও দুই যুবক খুন দুই লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খুন হয়েছেন দুই যুবক। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সহকারী ট্রেন চালক ও হবিগঞ্জের হাওর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে শাহীনূর আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূকে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানা রোডে ‘মোল্লাবাড়ি’ খ্যাত একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন শাহীনূর। তাঁর স্বামী মাসুদ মিয়া সৌদিপ্রবাসী। তিনি ছয় বছরের একটি সন্তানের মা।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত শুক্রবার দিনভর ওই গৃহবধূর ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। রাতে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে ভবনের অন্য বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ রাতেই ওই ভবনে গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। তাঁর পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেও ওই গৃহবধূকে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি হাসান জামিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া থেকে সহকারী লোকো মাস্টারের (সহকারী ট্রেন চালক) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদপাড়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এনামুল হক (৪৭) নামের রেলওয়ের এক সহকারী লোকো মাস্টারের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। এনামুল কুষ্টিয়া জেলার বারুইপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে।
শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনরা তাঁর লাশ বুঝে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ার ভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কের পাশের একটি ঝোপের ভেতর থেকে শামীম (৩০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শামীম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মিরেরবাগ এলাকার জজ মিয়ার ছেলে।
জজ মিয়ার ভাষ্য, শুক্রবার রাতে তাঁর মেয়ের জামাই মো. শফিক (শামীমের দুলাভাই) বাসা থেকে শামীমকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে শামীম নিখোঁজ ছিলেন। সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বোনকে মারধরের প্রতিবাদ করায় দুলাভাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে শামীমকে হত্যা করেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আখতার হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গতকাল নিমাইকাশারী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ থেকে মাকসুদুল হাসান জনি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
চুরির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ওই যুবককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরতলির উমেদনগর এলাকার পার্শ্ববর্তী হাওর থেকে নিখোঁজের ছয়দিন পর রঙ্গিলা মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
রঙ্গিলা মিয়া উমেদনগর মধ্যহাটির বাসিন্দা নুরুল হোসেনের ছেলে। তিনি শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডুবা হাওরে একটি বিল পাহারা দিতেন। গত সোমবার কর্মস্থল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)