<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাগড়াছড়িতে আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা (৪৮) নামের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিহত শিক্ষক সদরের খেজুরবাগান এলাকায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলা ও ভাঙচুর করা হয় বিভিন্ন স্থানে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিহত আবুল হাসনাত সোহেল রানা খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিভিল কনস্ট্রাক্টর অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইনস্ট্রাক্টর। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায়। কথিত ভিকটিম একই প্রতিষ্ঠানেরই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। পুলিশ নিহতের মরদেহ খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। </span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগে শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই অভিযোগ তুলে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সে সময় শিক্ষক সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের অফিসকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় অধ্যক্ষের কক্ষেই শিক্ষককে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারধর করছে। এক পর্যায়ে শিক্ষক সোহেল রানা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কক্ষ ও আসবাব।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ঘটনার পর বিষয়টি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে রূপ নেয়। উপজেলা পরিষদ এলাকা, মহাজনপাড়া ও চেঙ্গী স্কয়ারে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া শহরের মহাজনপাড়া, পানখাইয়াপাড়া সড়ক ও কল্যাণপুর এলাকায় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনায় পুলিশসহ কয়েকজন আহত হন। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। গতকাল বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবত থাকবে বলে জানানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কলেজটির অধ্যক্ষ আমানউল্লাহ আল হাসান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকাল ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানার ওপর হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে কেন মারধর করা হয়েছে সেটা জানি না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পার্বত্য নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ জানান, কেউ অপরাধী হলে বিচার হবে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, শিক্ষককে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইস্যু তৈরি করে পাহাড়কে অশান্ত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে হামলাকারীদের পক্ষের দাবি, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সোহেল রানা সকাল ৯টার দিকে সপ্তম শ্রেণির এক ত্রিপুরা ছাত্রীকে তার কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে যান। এটা ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা দেখে ফেলে এবং অন্য শিক্ষার্থীদের জানায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কলেজে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের কাছে যান মেয়েটির খোঁজ নিতে। সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে ছাত্রীকে ওই শিক্ষকের রুম থেকে উদ্ধার করা হয়। সে জানায়, ওই শিক্ষক তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে মারধর করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই শিক্ষক সোহেল রানাকে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা। বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল। সে সময় সোহেল রানাকে বদলি করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়। পরে ওই ছাত্রী আদালতে এসে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল। আজও ত্রিপুরা এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে ওই শিক্ষককে হত্যা করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, ঘটনায় যারাই জড়িত; তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামের এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে দোকানপাটে আগুন দেওয়া হয়। সংঘাতে দীঘিনালায় ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি মারা যান। ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি সদরে গোলাগুলিতে রুবেল ত্রিপুরা ও জুনান চাকমা নামের দুজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার জের ধরে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয় এবং অনিক কুমার চাকমা নামের একজন মারা যান। ২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।</span></span></span></span></p>