<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৬ বছরে আমরা ছাত্ররাজনীতিতে যেসব দুর্বৃত্তায়ন দেখেছি এবং তারও আগে যেসব ঘটনা ঘটেছে এর ফলে ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে এক ধরনের বিতৃষ্ণা আছে সমাজে। এই বিতৃষ্ণাকে অতিক্রম করতে হবে। ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়েই অবিভক্ত ভারতে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল। এমনকি পাকিস্তান আমলেও ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হয়েছিল। আমরা যদি রাজনৈতিক সুঠাম নেতৃত্ব আশা করি, তাহলে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা অস্বীকার করা চলবে না। আমাদের এখানে বছরের পর বছর হলো সংসদ নির্বাচন ডাকসু, রাকসু, জাকসু এগুলো হচ্ছে না। এগুলো যদি হতো তাহলে তার মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব সৃষ্টি হতো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মতো দলীয় ছাত্ররাজনীতি না থাকলেও অক্সফোর্ড ডিবেটিং ইউনিয়ন আছে, সেখানে ছাত্রসংসদ আছে এবং ডিবেটিং ইউনিয়নে ছাত্ররা রাজনৈতিক বিষয়াদি, দর্শনের বিষয়াদি এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে চমৎকার ডিবেট করে। ভারতেও তো ছাত্ররাজনীতি আছে। এখন সমস্যা যেটা, সেটা হচ্ছে দুর্বৃত্তায়ন। ছাত্ররাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন যদি না থাকে, তাহলে কারো আপত্তি করার কথা না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ হোক, কাল হোক, রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন দূর করতে হবে। এটা না করলে দেশের সমূহ সর্বনাশ হবে। এটার পুনরাবৃত্তি যদি হয়, তাহলে কিন্তু দেশে নৈরাজ্য দেখা দেবে। কাজেই এসব বিবেচনা করে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। সুশাসন না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন দলীয় লেজুড় হিসেবে কাজ করার ফলে দুর্বৃত্তায়নের পথটা সহজ হয়েছে। হল দখল করা, সিট দখল করা, গেস্টরুমের অত্যাচার, মারধর করা, মিছিলে যেতে চাপ সৃষ্টি করা, এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার যে দায়িত্ব সে দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে না বলেই উদ্ভব হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যখন পাকিস্তান আমলে ছাত্র ছিলাম আমাদের তখন সিট বণ্টন নিয়ে সমস্যা হতো না। একেবারে মেরিট অনুযায়ী কঠোরভাবে সিট বণ্টন হতো। এখনো তাই হওয়া উচিত। সেটা না হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আসবে না। কাজেই দায়িত্ব সবার। গণমাধ্যমকেও এই বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে। শিক্ষকমণ্ডলীকেও সোচ্চার হতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি মনে করি শিক্ষকমণ্ডলীর রাজনীতিতে যে লেজুড়বৃত্তি আছে সেটা পরিহার করে তারা বিভিন্ন স্কুল অফ থটস হিসেবে থাকতে পারেন। বিভিন্ন মতবাদের ধারক-বাহক হিসেবে থাকতে পারেন এবং সেটাই গণতন্ত্রের কথা। এগুলো না হয়ে দুর্বৃত্তায়নের বাড়াবাড়ি হয়েছে বলেই আজকে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা উঠছে। এটাও কিন্তু আবার একটি চরম অবস্থা। এর ফল যে খুব শুভ হবে তা না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেখা যাবে এক পর্যায়ে চেপে রাখা ছাত্ররাজনীতি অন্যভাবে আত্মপ্রকাশ করছে, বা ছাত্ররাজনীতি ছাড়া অন্য রাজনীতি অন্যভাবে আত্মপ্রকাশ করছে। কাজেই যেসব সিদ্ধান্ত একসময় বিশৃঙ্খল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেসব সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। বরং চেষ্টা করা উচিত বিদ্যমান অবস্থায় ত্রুটি-বিচ্যুতি কী আছে, সেগুলো সংস্কার করা বা সেগুলোকে বিদায় করার একটা উদ্যোগ গ্রহণ করা।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অর্থনীতিবিদ </span></span></span></span></p>