ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭
চাকরিচ্যুত গাড়িচালকসহ আরো তিনজন গ্রেপ্তার

সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় কর কর্মকর্তাকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় কর কর্মকর্তাকে অপহরণ
এনবিআর কর্মকর্তা অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মাসুদ, হাফিজ ও জলিল। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুনকে অপহরণ করে নির্যাতনের নেপথ্যে তাঁর চাকরিচ্যুত গাড়িচালক ছাড়াও তাঁর সাবেক স্বামী হারুন অর রশিদ জড়িত ছিলেন। মাসুমা খাতুন এই দুজনের ক্ষোভের শিকার। এ ঘটনায় দুই সহযোগীসহ গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, মাসুমা খাতুনকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়িচালক মাসুম ওরফে মাসুদ ও তাঁর দুই সহযোগী আব্দুল জলিল পনু ও হাফিজ শাহীনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ নিয়ে এই মামলার ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য তিনজন হচ্ছেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। মাসুমা খাতুনকে অপহরণে জড়িত পাঁচজনই চালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ।

খন্দকার আল মঈন বলেন, মাসুদসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তাঁর সাবেক স্বামী। মোটা অঙ্কের টাকা ও উন্নত জীবনের প্রলোভনে মাসুমা খাতুনের গাড়িচালক মাসুদ অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেন। এর আগে অসদাচরণের কারণে গত ১ আগস্ট মাসুদকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন মাসুমা। এতে তাঁর প্রতি ক্ষোভ ও আক্রোশের জন্ম নেয় মাসুদের।

মূলত এই সুযোগটি হারুন অর রশিদ কাজে লাগান।

মাসুদকে উদ্ধৃত করে কমান্ডার আল মঈন আরো বলেন, চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর মাসুদ হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিকল্পনা হয়, উচিত শিক্ষা দিতে মাসুমা খাতুনকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য মাসুদকে ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মাসুদ তাঁর পাঁচ সহযোগীর মধ্যে ওই টাকা ভাগ করে দেন।

মাসুমা খাতুনের বর্তমান চালকের কাছ থেকে তাঁর অবস্থান জেনে নেন অপহরণকারীরা।

১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে মাসুমা খাতুন সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বেইলি রোডে পৌঁছলে অপহরণকারীরা একটি মোটরসাইকেল ও রিকশা দিয়ে তাঁর গাড়ির গতি রোধ করেন। তখন গাড়ির চালক নিচে নামলে তাঁকে মারধর করে চালকের আসনে বসেন আসামি মাসুদ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুমা খাতুনকে হাতিরঝিলের বাসাটির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাসার প্রধান দরজা বন্ধ থাকায় অপহরণকারীরা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে থাকে। পরে রাত ১২টার দিকে কাঁচপুরে মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে মাসুমা খাতুনকে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এ সময় মাসুমার কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরদিন মাসুমাকে মাদারটেকের একটি বাসায় নেওয়া হয়।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, মাদারটেকের বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ আবার মাসুমার প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মাসুমাকে হাতিরঝিলের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। ওই বাসায় যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান। আর গাড়ি পাহারায় থাকেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। এ সময় মাসুমা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাঁকে উদ্ধার এবং ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

এক প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, ‘আমরা মাসুমার প্রথম স্বামী হারুনের কথা শুনেছি আসামিদের কাছ থেকে। হারুনের নাম মামলার এজাহারে নেই। তাঁর তথ্য তদন্ত সংস্থাকে জানানো হবে।’

এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা রমনা থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অপহৃত নারীর সাবেক স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মাসুমার বর্তমান স্বামী মুহম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, ‘গত ৩১ জুলাই আমরা স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে সিলেটের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাই। ১ আগস্ট গাড়িচালক মাসুদ অসদাচরণ করে মাসুমার সঙ্গে। এ কারণে তাঁর কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন মাসুমা। সে সময় তাকে (মাসুদ) অন্য হোটেলে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সিলেটে অবস্থান না করে মাসুদ ঢাকায় এসে মাসুমার সাবেক স্বামী হারুনুর রশিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে। তাই সার্বিকভাবে আমার মনে হচ্ছে, এ ঘটনার সঙ্গে হারুন অর রশিদ জড়িত থাকতে পারে।’

হারুনর অর রশিদ সম্পর্কে জানা যায়, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। গত এপ্রিলে তিনি এনবিআরের কাছে মাসুমার বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ করেন যে তাঁকে যথাযথভাবে তালাক না দিয়ে মাসুমা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। মাসুমা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

হারুন অর রশিদ বড় মগবাজারের বাসায় সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তাঁর এক ছেলে বলেন, ‘বাবা-মায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। একসময় আমরা সবাই একই ফ্ল্যাটে থাকলেও পরে পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাটে মা-বাবা আলাদা থাকেন।’ মাসুমা খাতুন ঘটনার পর রাজধানীর চারটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ

ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন

যেখানে ইয়ারলুং সভ্যতা প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, হিমালয়ের পাদদেশের সেই স্থানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পানিবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন। গতকাল শনিবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। 

ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত ইয়ারলুং জাংবো নদীটি; দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল।

তিব্বত ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংবো নদীতে মেগাবাঁধের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছে চীন।

মেগাবাঁধের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং উপস্থিত ছিলেন। ২০২০ সালের নভেম্বরে ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ওই পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায় চীন। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় বেইজিং।

২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে তিব্বতে এই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গতি দ্বিগুণ করেছে বেইজিং।

যদিও পরিবেশবাদী এবং তিব্বতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইয়ারলুং জাংবো নদীর উৎসমুখে এই বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে।

তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিংচি এলাকায় এই বাঁধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।

ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হলে তা চীনের মধ্যাঞ্চলের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত রেকর্ড গড়া থ্রি গর্জেস বাঁধকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাটি অঞ্চলের প্রবাহে কোটি কোটি মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।

সিনহুয়া বলেছে, এই প্রকল্পে পাঁচটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত বলেছিল, তিব্বতের এই প্রকল্প নিয়ে চীনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত বলেছে, তারা তিব্বতে চীনা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উজানে কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা চীনকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না এবং চীন নদীর নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।

নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর উদ্বেগের পাশাপাশি পরিবেশবিদরাও চীনের এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। পরিবেশবিদরা বলেছেন, এমন মেগাপ্রকল্প পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল তিব্বত মালভূমিতে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে।

থ্রি গর্জেস প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চীন ১৪ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করেছিল। ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকার চেয়ে ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকা কম ঘনবসতিপূর্ণ। এর আগে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং জাংবো বাঁধ তিব্বতের মিডগ কাউন্টিতে নির্মাণ করা হবে, যে শহরের জনসংখ্যা ১৪ হাজার। এই বাঁধ নির্মাণে কতসংখ্যক মানুষ স্থানান্তরিত হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বাঁধটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না।

২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের এক আধার এবং বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। হিমবাহ গলে এবং পাহাড়ের ঝরনা বয়ে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহের মাধ্যমে ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে খাবার পানির জোগান দেয় ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ। সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

মৃত্যু বাড়ছে ইজি বাইকে

    নিবন্ধন নেই, হচ্ছে নীতিমালা ১০ বছরে ১০ হাজার চালককে হত্যা : হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মৃত্যু বাড়ছে ইজি বাইকে

সড়কে প্রতিদিন প্রাণহানি বাড়ছেই। এর বড় কারণ ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকসহ তিন চাকার বাহন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তিন চাকার এই বাহন বাড়ছেই। এ ধরনের বাহনের নিবন্ধন নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।

তবে তিন চাকার এ ধরনের বাহনের জন্য সরকার একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। এই নীতিমালায় এগুলোর নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যদিও তা এখনো কার্যকর করা হয়নি।

ইজি বাইক ছিনতাই করার জন্য চালকদের পরিকল্পনা করে হত্যা করছে বিভিন্ন জেলার চক্র।

তবে প্রকৃত ঘটনার তুলনায় এ ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে না। ইজি বাইক ছিনতাই করে চালকদের হত্যা করার ঘটনা ঘটছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, সিলেট, ময়মনসিংহ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলায়।

এ ব্যাপারে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১০ বছরে সারা দেশে দুষ্কৃতকারী ও ছিনতাইকারীরা কমপক্ষে ১০ হাজার চালককে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার চালক আহত হয়েছেন।

আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, নিহত ও আহত চালকের তালিকা করে তাঁদের পরিবার-পরিজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য।

জানা গেছে, এরই মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশাকে। এ ধরনের বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়কভেদে এই ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।

নীতিমালা আরো সময়োপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো বন্ধ করা যায়নি।

বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানি ও উৎপাদন হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানো হলেও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেড়েছে।

বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজি বাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কারিগরিভাবে সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত নয়। এর ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে এগুলোর চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই এসব ছোট যানবাহনের যাত্রী। কিন্তু সাশ্রয়ী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব বাহনে নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার এগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো নিয়মের বাইরে গিয়ে চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা হয়নি। ২০১১ সালে ইজি বাইক আমদানি বন্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত থাকে। ২০১৯ সালের জুনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক করে দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি করে বিআরটিএ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১২ সদস্যের ওই কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইকের মতো বাহনের কারণে। প্রতিবছর এই বাহনে প্রাণহানি বাড়ছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার তথ্য আবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মেয়েদের আরেক জয়

শেয়ার
মেয়েদের আরেক জয়

গতকাল বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠে নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উমেহলা মারমার সঙ্গে উদযাপন পূজা দাসের (ডানে)। তাঁর জোড়া গোলে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফ ফুটবলে কাল শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি : মীর ফরিদ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

চার জেলায় গৃহবধূ ও দুই যুবক খুন দুই লাশ উদ্ধার

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চার জেলায় গৃহবধূ ও দুই যুবক খুন দুই লাশ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খুন হয়েছেন দুই যুবক। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সহকারী ট্রেন চালক ও হবিগঞ্জের হাওর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে শাহীনূর আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূকে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল শনিবার পুলিশ গিয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানা রোডে মোল্লাবাড়ি খ্যাত একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন শাহীনূর। তাঁর স্বামী মাসুদ মিয়া সৌদিপ্রবাসী। তিনি ছয় বছরের একটি সন্তানের মা।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত শুক্রবার দিনভর ওই গৃহবধূর ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। রাতে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে ভবনের অন্য বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ রাতেই ওই ভবনে গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। তাঁর পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।

পরনে ছিল অন্তর্বাস। খবর পেয়ে জেলা শহর থেকে পুলিশের সিআইডির একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ঘটনার সময় গৃহবধূর একমাত্র সন্তান পাশের ছলিমাবাদ গ্রামে তার নানাবাড়িতে ছিল।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেও ওই গৃহবধূকে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি হাসান জামিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।

লাশের পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) পিয়াস বসাক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া থেকে সহকারী লোকো মাস্টারের (সহকারী ট্রেন চালক) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদপাড়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এনামুল হক (৪৭) নামের রেলওয়ের এক সহকারী লোকো মাস্টারের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। এনামুল কুষ্টিয়া জেলার বারুইপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে।

শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনরা তাঁর লাশ বুঝে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ার ভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কের পাশের একটি ঝোপের ভেতর থেকে শামীম (৩০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শামীম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মিরেরবাগ এলাকার জজ মিয়ার ছেলে।

জজ মিয়ার ভাষ্য, শুক্রবার রাতে তাঁর মেয়ের জামাই মো. শফিক (শামীমের দুলাভাই) বাসা থেকে শামীমকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে শামীম নিখোঁজ ছিলেন। সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বোনকে মারধরের প্রতিবাদ করায় দুলাভাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে শামীমকে হত্যা করেছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আখতার হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গতকাল নিমাইকাশারী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ থেকে মাকসুদুল হাসান জনি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১১) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

চুরির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ওই যুবককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরতলির উমেদনগর এলাকার পার্শ্ববর্তী হাওর থেকে নিখোঁজের ছয়দিন পর রঙ্গিলা মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

রঙ্গিলা মিয়া উমেদনগর মধ্যহাটির বাসিন্দা নুরুল হোসেনের ছেলে। তিনি শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডুবা হাওরে একটি বিল পাহারা দিতেন। গত সোমবার কর্মস্থল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ