নিখোঁজের দুই দিন পর পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের এক গাড়িচালকের বস্তাবন্দি লাশ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে সাদীপুর ঘাট এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি সাদা রঙের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ির ভেতর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িটিও জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ায় রূপপুর প্রকল্পের গাড়িতে চালকের লাশ
- এক নারী আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া, পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রতিনিধি

নিহত মো. সম্রাট খান (২৭) রূপপুর প্রকল্পের রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিকিমথের পরিচালক ইউরো ফেদোলোভের ভাড়া করা ব্যক্তিগত গাড়ির (টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার) চালক। তিনি ঈশ্বরদী শহরের মধ্য অরণকোলা (আলহাজ ক্যাম্প) এলাকার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে সম্রাটের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আটক নারী (২৫) নিহত সম্রাটের এক বন্ধুর স্ত্রী (৩৫)।
নিহত সম্রাটের বাবা আবু বক্কার সিদ্দিক ও চাচা আলমগীর হোসেন বাদশা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে সম্রাট বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে রূপপুর প্রকল্পের অফিসে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর আর ফিরে আসেননি। অনেক খুঁজেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কুমারখালী থানা পুলিশ জানায়, ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি গত দুই দিন ধরে কুমারখালীর সাদিপুর ঘাটের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। গতকাল সকালে গাড়িটি থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে চালক সম্রাটের লাশ উদ্ধার করে।
কুমারখালী থানার ওসি মোহসীন হোসাইন বলেন, সম্রাটকে অন্য কোথাও হত্যার পর গাড়িসহ লাশ সাদিপুর ঘাট এলাকায় রেখে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
আটক নারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদের বরাত দিয়ে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ, আরবিডি কম্পানিতে ভাড়া দেওয়া গাড়ির মালিক আনিসুর রহমান ও এলাকাবাসী জানায়, নিহত সম্রাট ও আটক নারীর স্বামী দুজনই আরবিডি কম্পানির মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে নিকিমথ কম্পানির গাড়িচালক ছিলেন। একসঙ্গে কাজের সূত্রে দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়। তাই বন্ধুর বাড়িতে সম্রাটের অবাধ যাতায়াত ছিল। আটক বন্ধুর স্ত্রী জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন আগে তিনি সম্রাটের গাড়িতে ঈশ্বরদী যাওয়ার পথে কোমল পানীয়তে কিছু একটা মিশিয়ে তাঁকে পান করানো হয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে গাড়িতে তাঁকে ধর্ষণ ও মোবাইল ফোনে এর ভিডিও ধারণ করেন সম্রাট। এরপর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে মাঝেমধ্যে তাঁকে ধর্ষণ করতেন সম্রাট। কয়েক মাস আগে সম্রাট ভিডিওটি মুছে ফেলার কথা বলে তাঁকে পাকশী রিসোর্টে ডেকে নিয়েও ধর্ষণ করেন। কিন্তু শত অনুরোধেও ভিডিওটি মোছেননি।
এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্রাট গাড়ি নিয়ে ওই বন্ধু ও তাঁর স্ত্রীর বাড়িতে যান। তাঁর মাথা ব্যথা করছে জানিয়ে সম্রাট বন্ধুর বিছানায় শুয়ে পড়েন। আর বন্ধুকে ওষুধ আনতে দোকানে পাঠান। এরপর বন্ধুর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি (বন্ধুর স্ত্রী) ঘরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে সম্রাটের মাথায় আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। বন্ধু ওষুধ নিয়ে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর কাছে সব শোনেন। এরপর তাঁরা দুজন সম্রাটকে বস্তায় ভরে গাড়িতে তুলে বের হন। এ সময় সম্রাট যন্ত্রণায় বস্তার ভেতরে গোঙাতে থাকেন। তখন তাঁরা গাড়িতে উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকেন। সম্রাটের মৃত্যু নিশ্চিত হলে স্ত্রীকে পাবনা সদরের মাধপুরে নামিয়ে দিয়ে বস্তাভর্তি লাশ নিয়ে গাড়িসহ স্বামী (সম্রাটের বন্ধু) চলে যান।
ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটির মালিক আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার সকালে গাড়ি নিয়ে সম্রাট অফিসে না গেলে নিকিমথ কম্পানি থেকে ফোনে তাঁকে জানানো হয়। তিনি ফোনে চেষ্টা করেও সম্রাটকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন। এরপর পুলিশ সম্রাটের ফোনের সর্বশেষ অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ওই বন্ধুর (আটক নারীর স্বামী) বাড়িতে কয়েকবার যায়। পুলিশের জেরার মুখে এক পর্যায় ওই নারী জানান, তিনি সম্রাটকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। তাঁর স্বামী লাশ লুকাতে গাড়ি নিয়ে গেছেন।
নিহত সম্রাটের বাবা আবু বক্কার সিদ্দিক ও চাচা আলমগীর হোসেন বাদশা জানান, সম্রাটকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নিকিমথ কম্পানিতে গাড়ি সরবরাহকারী আরবিডি কম্পানির হয়ে গাড়িচালকের কাজ করলেও নিজেও বিভিন্ন জায়গা থেকে গাড়ি এনে প্রকল্পে ভাড়া দিতেন। বৃহস্পতিবার সেসব গাড়ির মাসিক ভাড়াসহ তাঁর বেতনের টাকা পাওয়ার কথা ছিল। এ টাকার কারণে হয়তো পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, নিহত সম্রাটের পরিবার ও গাড়ির মালিকের তথ্যের ভিত্তিতে এক নারীকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকগুলো বিষয় গুরুত্ব দিয়ে হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার পেছনে নারীঘটিত ব্যাপার রয়েছে। আটক নারীকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা যাবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক নারীর স্বামীকে আটকের চেষ্টা চলছে।
সম্পর্কিত খবর

বাংলাদেশ-ভারতের উদ্বেগ
ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

যেখানে ইয়ারলুং সভ্যতা প্রথম তিব্বতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, হিমালয়ের পাদদেশের সেই স্থানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পানিবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন। গতকাল শনিবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত ইয়ারলুং জাংবো নদীটি; দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল।
তিব্বত ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংবো নদীতে মেগাবাঁধের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছে চীন।
২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে তিব্বতে এই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গতি দ্বিগুণ করেছে বেইজিং।
তিব্বতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিংচি এলাকায় এই বাঁধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।
ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হলে তা চীনের মধ্যাঞ্চলের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত রেকর্ড গড়া ‘থ্রি গর্জেস বাঁধকেও’ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাটি অঞ্চলের প্রবাহে কোটি কোটি মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।
সিনহুয়া বলেছে, এই প্রকল্পে পাঁচটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত বলেছিল, তিব্বতের এই প্রকল্প নিয়ে চীনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত বলেছে, তারা তিব্বতে চীনা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উজানে কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা চীনকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরে ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনো ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না এবং চীন নদীর নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।
থ্রি গর্জেস প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চীন ১৪ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করেছিল। ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকার চেয়ে ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকা কম ঘনবসতিপূর্ণ। এর আগে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং জাংবো বাঁধ তিব্বতের মিডগ কাউন্টিতে নির্মাণ করা হবে, যে শহরের জনসংখ্যা ১৪ হাজার। এই বাঁধ নির্মাণে কতসংখ্যক মানুষ স্থানান্তরিত হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি বাঁধটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না।
২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের এক আধার এবং বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। হিমবাহ গলে এবং পাহাড়ের ঝরনা বয়ে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহের মাধ্যমে ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে খাবার পানির জোগান দেয় ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ। সূত্র : এএফপি

মৃত্যু বাড়ছে ইজি বাইকে
- নিবন্ধন নেই, হচ্ছে নীতিমালা
১০ বছরে ১০ হাজার চালককে হত্যা : হানিফ
নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে প্রতিদিন প্রাণহানি বাড়ছেই। এর বড় কারণ ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকসহ তিন চাকার বাহন। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তিন চাকার এই বাহন বাড়ছেই। এ ধরনের বাহনের নিবন্ধন নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।
ইজি বাইক ছিনতাই করার জন্য চালকদের পরিকল্পনা করে হত্যা করছে বিভিন্ন জেলার চক্র।
এ ব্যাপারে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১০ বছরে সারা দেশে দুষ্কৃতকারী ও ছিনতাইকারীরা কমপক্ষে ১০ হাজার চালককে হত্যা করেছে। কমপক্ষে ৩০ হাজার চালক আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশাকে। এ ধরনের বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়কভেদে এই ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।
হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এগুলো বন্ধ করা যায়নি।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানি ও উৎপাদন হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানো হলেও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী বেড়েছে।
বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইজি বাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কারিগরিভাবে সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত নয়। এর ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে এগুলোর চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের বড় অংশই এসব ছোট যানবাহনের যাত্রী। কিন্তু সাশ্রয়ী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এসব বাহনে নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার এগুলো বন্ধের ঘোষণা দিলেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো নিয়মের বাইরে গিয়ে চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা হয়নি। ২০১১ সালে ইজি বাইক আমদানি বন্ধে সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত থাকে। ২০১৯ সালের জুনে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহবায়ক করে ‘দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি’ করে বিআরটিএ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ১২ সদস্যের ওই কমিটি প্রতিবেদনে জানায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবিকা হয়েছে। তাই সড়ক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইকের মতো বাহনের কারণে। প্রতিবছর এই বাহনে প্রাণহানি বাড়ছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনার তথ্য আবার সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

মেয়েদের আরেক জয়

গতকাল বসুন্ধরা কিংসের অনুশীলন মাঠে নিজের দ্বিতীয় গোলের পর উমেহলা মারমার সঙ্গে উদযাপন পূজা দাসের (ডানে)। তাঁর জোড়া গোলে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-২০ সাফ ফুটবলে কাল শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি : মীর ফরিদ
।
চার জেলায় গৃহবধূ ও দুই যুবক খুন দুই লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খুন হয়েছেন দুই যুবক। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সহকারী ট্রেন চালক ও হবিগঞ্জের হাওর থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে শাহীনূর আক্তার (২৬) নামের এক গৃহবধূকে ঘরে ঢুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের থানা রোডে ‘মোল্লাবাড়ি’ খ্যাত একটি ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকতেন শাহীনূর। তাঁর স্বামী মাসুদ মিয়া সৌদিপ্রবাসী। তিনি ছয় বছরের একটি সন্তানের মা।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গত শুক্রবার দিনভর ওই গৃহবধূর ফ্ল্যাট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। রাতে ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হলে ভবনের অন্য বাসিন্দারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ রাতেই ওই ভবনে গিয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। তাঁর পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলেও ওই গৃহবধূকে বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি হাসান জামিল খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়া থেকে সহকারী লোকো মাস্টারের (সহকারী ট্রেন চালক) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত করছে পুলিশ। এটি হত্যা না আত্মহত্যা, সেটি নিশ্চিত করতে কাজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মসজিদপাড়া এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে এনামুল হক (৪৭) নামের রেলওয়ের এক সহকারী লোকো মাস্টারের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে আখাউড়া থানা পুলিশ। এনামুল কুষ্টিয়া জেলার বারুইপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে।
শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনরা তাঁর লাশ বুঝে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর ভাওয়ার ভিটি এলাকায় ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে সড়কের পাশের একটি ঝোপের ভেতর থেকে শামীম (৩০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত শামীম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন মিরেরবাগ এলাকার জজ মিয়ার ছেলে।
জজ মিয়ার ভাষ্য, শুক্রবার রাতে তাঁর মেয়ের জামাই মো. শফিক (শামীমের দুলাভাই) বাসা থেকে শামীমকে ডেকে নিয়ে যান। এর পর থেকে শামীম নিখোঁজ ছিলেন। সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, বোনকে মারধরের প্রতিবাদ করায় দুলাভাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে শামীমকে হত্যা করেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আখতার হোসেন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গতকাল নিমাইকাশারী এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশ থেকে মাকসুদুল হাসান জনি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলম, আলমগীর হোসেন ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
চুরির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ওই যুবককে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনূর আলম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ শহরতলির উমেদনগর এলাকার পার্শ্ববর্তী হাওর থেকে নিখোঁজের ছয়দিন পর রঙ্গিলা মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তির ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
রঙ্গিলা মিয়া উমেদনগর মধ্যহাটির বাসিন্দা নুরুল হোসেনের ছেলে। তিনি শহরের পার্শ্ববর্তী কালারডুবা হাওরে একটি বিল পাহারা দিতেন। গত সোমবার কর্মস্থল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)