<p>আইনের দুর্বলতা, কৃষি ও বহুমুখী সমবায় সমিতির ঋণ কার্যক্রমে জটিলতা, সমবায় ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত হওয়া, আমানত সুবিধা বন্ধ থাকা, নতুন শাখা অফিস চালু করাসহ নানা জটিলতায় দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।</p> <p>আবার অনেকে সমবায় সমিতিতে টাকা জমা করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সমিতি খুলে টাকা সংগ্রহ করে সটকে পড়ছেন উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় সমবায় সমিতি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।</p> <p>আজ শনিবার দেশব্যাপী জাতীয় সমবায় দিবস পালিত হচ্ছে। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন’।</p> <p>সংশোধিত আইনের খসড়ায় সমবায় সমিতিতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সদস্য ও কমিটি বহিষ্কার ছাড়াও জড়িতদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগের লক্ষ্যে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।</p> <p>সমবায় সমিতির সম্পত্তিতে সরকারি অর্থায়নে স্থাপনা নির্মাণ ও প্রকল্প গ্রহণের সুযোগও রাখা হয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া ‘সমবায়’ শব্দ ব্যবহারে আদালতে মামলা করা ও জেল-জরিমানার বিধান থাকছে।</p> <p>খসড়া বিলের ১০ ধারায় নতুন একটি উপধারা (৬) যুক্ত করা হয়েছে। ওই উপধারায় নিবন্ধন প্রাপ্তির তিন বছরের মধ্যে সমবায় সমিতির নিবন্ধন নবায়নের বিধান চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।</p> <p>বিলে প্রাথমিক সমবায় সমিতির সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০০ করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে সমবায় ব্যাংকের বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।</p> <p>এ বিষয়ে সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক (আইন) মো. কামরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিলে সমবায় সমিতিগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বিধান যুক্ত করা হয়েছে।  সমিতিগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সমবায় সমিতির বেদখলে থাকা সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সমবায় সমিতির মালিকানাধীন জমিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সমিতির যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।</p> <p>প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস হলে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা ও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে সমবায় সমিতি আইনের সংশোধনী পাস হতে পারে। এটি হলে সমবায় সমিতির নামে প্রতারণা ও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ বন্ধ করা সহজ হবে।</p> <p><strong>মাঠের চিত্র</strong></p> <p>মাগুরা জেলা সমবায় কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি মল্লিক কালের কণ্ঠকে বলেন, মাগুরা জেলায় ৭৩৯টি সমবায় সমিতি আছে। এর মধ্যে ৪৯৩টি অকার্যকর। তিনি বলেন, ‘সমিতিগুলোকে কোনো সহযোগিতা করতে পারি না। সমবায় ব্যাংকও ঋণ দিচ্ছে না। ফলে দিন দিন নিষ্ক্রিয় সমিতির সংখ্যা বাড়ছে।’</p> <p>জানা গেছে, সারাদেশে সঞ্চয় ও ঋণদান, কৃষি ও বহুমুখী সমবায় সমিতি—এই তিন ধরনের সমিতির প্রায় এক লাখ সদস্যকে পাঁচ হাজার টাকা করে ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। কিন্তু সমিতিগুলোকে মওকুফ করা হয়নি। এমন নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক সমিতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।</p> <p>মাগুরা, ঠাকুরগাঁও ও বাগেরহাট জেলার একাধিক কৃষি সমবায় সমিতির নেতা জানান, আগে তাঁরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিঋণসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতেন। কিন্তু এখন সেটা আগের মতো আর দেওয়া হয় না। তা ছাড়া সমিতি সক্রিয় রাখতে হলে নিয়মিত সভা, নির্বাচন ও অডিট করানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। নতুন আমানত বাড়ানোর ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে সদস্যরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।</p> <p>নেতারা অভিযোগ তুলে বলেন, ২০১৩ সালে সমবায় আইন সংশোধনের সময় সমবায়ীদের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। সমবায় সদস্যদের চেয়ে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং বেসরকারি ব্যাংককে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়। মূলত সমবায় আইন সংশোধনের পর প্রায় সব সমবায় সমিতি অকার্যকর, অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে ঢুকে গেছে।</p> <p>সমবায় অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পর্যায়ে ২২টি সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে শুধু সক্রিয় রয়েছে মিল্ক ভিটা। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক হাজার ২১০টি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এক লাখ ৯১ হাজার ২২৮টি সমবায় সমিতি রয়েছে। চলতি বছর ১১ হাজার ৬০টি সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় পাঁচটি ও প্রাথমিক ১১ হাজার ৫৪টি।</p> <p>কৃষি, মৎস্য, মহিলা, আশ্রয়ণ, পানি ব্যবস্থাপনা, সিআইজি, সঞ্চয় ও ঋণদান, দুগ্ধ, পরিবহন, গৃহায়ণ, বাজারজাতকরণ, শিল্প, বহুমুখীসহ ৩২ ধরনের সমবায় সমিতি আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ শ্রেণির কোনো অস্তিত্ব নেই। এসব সমিতিতে পুরুষ সদস্য ৯১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৯ জন এবং নারী সদস্য ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৬ জন।</p> <p>সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সমবায়ের সদস্যরাই সমবায়গুলো পরিচালনা করবেন, তাঁরাই হবেন এর শক্তি, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন এবং তাঁরাই সমিতি পরিচালনা করবেন। কিন্তু আইনি দুর্বলতার কারণে অনেক সমবায় সমিতি পরিচালনা করছেন বহিরাগতরা। সমবায় সমিতির মূল কাজ পরিচালনা করছেন আমলারা। এ ছাড়া সমবায় সমিতির অডিট স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে হবে। অডিট, ব্যবস্থাপনা ও পরিদর্শনকাজে সমবায় কর্মকর্তাদের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।</p>